আদালতের বিচারকদের চাকরি বিধি সুপ্রিম কোর্টে: আইনমন্ত্রী
অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির খসড়া চূড়ান্ত করে সুপ্রিম কোর্টকে দেয়া হয়েছে –জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ‘রিফ্রেশার কোর্সের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেলেই ওই খসড়া অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি যদি সেটিসফায়েড হন, তিনি যদি অনুমোদন দেন তাহলে গেজেট প্রকাশের আর বিলম্ব হবে না যোগ করেন তিনি।
খসড়া প্রকাশের বিষয়টি কোনপর্যায়ে আছে—এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি এরকম যে আমরা আলোচনার মাধ্যমে যে ড্রাফটে সম্মত হয়েছি সেটার ফাইনাল ড্রাফট করা হয়েছে। গতকাল সেটা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে মুহূর্তে ফিরে আসবে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে সেটা মাহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কাকরাইলে জাজেস কমপ্লেক্সে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার বাসভবনে বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্যের অবসান ঘটেছে।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণবিধির বিষয়ে কিছু মতপার্থক্য ছিল যেসব মতপার্থক্য দূর করেছি। শৃঙ্খলাবিধির ব্যাপারে আমরা ঐকমত্যে এসেছি। এখন বিধিমালার খসড়া রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে এবং তার অনুমোদন পেলে গেজেট প্রকাশ করা হবে। আশা করছি, ৩ ডিসেম্বর আদালতে শুনানির যে দিন রয়েছে তার আগেই গেজেট প্রকাশ হতে পারে।
এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিধিমালার খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেন।
গত ৩০ জুলাই তা তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
মতপার্থক্য নিরসনে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডেকেও পাঠিয়েছিলেন তিনি— কিন্তু আইনমন্ত্রী ওই সময় সুপ্রিম কোর্টে না যাওয়ায় গত ২০ আগস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি সিনহা।
এরই মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়েন প্রধানবিচারপতি এসকে সিনহা পরে ১০ নভেম্বর ছুটি শেষে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
এরপর বিচারকদের চাকরিবিধির এ বিষয়টি গত ৮ অক্টোবর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য তোলা হলে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। ৫ নভেম্বর বিষয়টি আদালতে এলে অ্যাটর্নি জেনারেল আবারও সময়ের আবেদন করেন। শুনানি শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করে।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে টানাপড়েনের মধ্যে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন রেখেছিলেন- বিচার বিভাগে দ্বৈতশাসন চলছে।
যে গেজেট সরকার প্রকাশ করতে যাচ্ছে সেখানে সেই ‘দ্বৈতশাসনের’ অবসান ঘটবে কি না- এ প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, যখন এটা বেরুবে নিশ্চই দেখবেন দ্বৈতশাসন আছে কিনা— দেখুন, উনার এসব কথার প্রত্যেকটার জবাব আমি দিতে পারব না। তার কারণ হচ্ছে, আমি দিব না।
আপিল বিভাগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় হয়েছিল সাত বিচারকের বেঞ্চে— এখন সেখানে পাঁচ বিচারক আছেন সেক্ষেত্রে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউ শুনানির ক্ষেত্রে কোনো সঙ্কট হবে কি না, কিংবা বিচারক নিয়োগ করতে হবে কি না?
জবাবে সুপ্রিম কোর্ট রুলস থেকে উদ্ধৃত করে আইনমন্ত্রী বলেন, রিভিউ শুনানিতে সাত বিচারপতি থকতে হবে সুপ্রিম কোর্ট রুলসে এমন কোনো কথা নেই আমার জানা মতে। এমন অনেক রিভিউ আছে যেখানে অনেকেই অবসরে গেছেন কিন্তু রিভিউ শুনানি হয়েছে।
তবে আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে বলে জানান তিনি।