অতিথি পাখি’র পদচারণায় মূখরিত জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়
আব্দুস সাত্তার, সাভার ও আশুলিয়াঃ
হেমন্তের ফসল তোলার আমেজের রেশ না কাটতেই যেন ধীরে ধীরে শীতের আবির্ভাব। তা ঘিরে এখন কুয়াশায় ঘেরা প্রকৃতি, শিশিরসিক্ত পথ-ঘাট, হিমেল বাতাসের শিহোরিত আমেজ। এরমধ্যে সাত সাগর পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে অতিথি পাখিগুলো এই বার্তা নিয়ে ভীড় করতে শুরু করেছে।
সাইব্রেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারত থেকে আসা অতিথি পাখির পদচারণায় মুখরিত সাভারের জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়। এরা মূলত নভেম্বরের প্রথম দিকে আসতে শুরু করে আবার মার্চের শেষ দিকে ফিরে যায় তাদের নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে। তাই প্রতিবারের মতো এবারও রক্তকমল শোভিত লেকগুলোয় আসতে শুরু করেছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। শীতের চাদরে ঢাকা কুয়াশার পরশে শিশির কণার ঝলকানি। শীতের এই সন্ধিক্ষণে প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য অঙ্গণে যোগ হয়েছে এক ভিন্নমাত্রা। এ পাখিদের দেখভালের জন্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ সাধারণ মিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হলসংলগ্ন লেক, জিমনেসিয়াম সংলগ্ন লেক ও ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টার সংলগ্ন লেকসহ মোট ১৫টি লেক আছে। অতিথি পাখির বিচরণে প্রতিটি লেক যেন পেয়েছে পরিপূর্ণতা। এ লেকগুলোর পানির মিতালিতে জলকেলী আর ডুব-সাঁতারে পরস্পর লুকোচুরি খেলছে। এরা আবার ক্যাম্পাসের খোলা আকাশের নিচে মুক্তমনে উড়ে বেড়াচ্ছে। পাখিদের এ মনোরম মিলনমেলা দেখতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুঁটে আসছে পাখিপ্রেমী মানুষজন। কেউ কেউ কাঁটিয়ে দেন সকাল থেকে সন্ধ্যা। কেউ আবার স্মৃতিকে ধরে রাখতে ক্যামেরা বন্ধি করছেন। সব মিলিয়ে পাখিদের কলকাকলিতে মিষ্টি সুরের আবহ; যা দেখে দর্শকও বিমোহিত।
ঘুরতে আসা দর্শণার্থীরা জানান, কাজের ফাঁকে কিছুটা সময় হলেও অতিথি পাখিদের দেখার জন্য নিজেই বা স্বপরিবারে ছুঁটে আসি। তবে দিন-দিন অতিথি পাখির আগমন কমছে বলেও জানান তিনি।
কর্তৃপক্ষ জানান, পাখি প্রেমীদের জন্য প্রতিবছরে পাখিমেলার আয়োজন করা হয়।
পাখি বিশেষজ্ঞ জানান, বাংলাদেশে মোট ৬৯০ প্রজাতির পাখির মধ্যে প্রায় ২৩৮ প্রজাতির অতিথি পাখির দেখা মেলে। ১৯৮৬ সাল থেকে এ ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির পদচারণ। সে সময় জাহাঙ্গীরনগরে ৯০ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখি দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে ১২৬ টি দেশি ও ৬৯টি পরিযায়ী বা অতিথি প্রজাতির। দেশী প্রজাতির মধ্যে ৭৮টি ক্যাম্পাসে নিয়মিত থাকছে।
আরো জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব অতিথি পাখি আসে এর বেশির ভাগই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। এর মধ্যে প্রায় ১০ প্রজাতির হাঁস-জাতীয় পাখি ক্যাম্পাসে দেখা যায়। এর মধ্যে ছোট সরালি, বড় সরালি, খঞ্জণা, পাতারি হাঁস, ভূতিহাঁস, খুম্ভেহাঁস, লেঞ্জাহাঁস, গার্গেনী, ঝুঁটিহাঁস প্রধান।