রাসিকের ঘাড়ে ফের ঋণের বোঝা
কর্মকর্তা কর্মচারিদের চার কোটি টাকা বেতন বেকেয়াসহ ২৭ কোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে ২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) নগর পিতার দায়িত্ব নিয়ে ছিলেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেই ঋণ পরিশোধ করে ১৩ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রেখে ২০১৩ সালে মেয়রের দায়িত্ব ছাড়েন তিনি। মেয়রের দায়িত্ব নেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সেই রাসিক গত সাড়ে চার বছরে প্রায় দেওলিয়া। বর্তমানে রাসিকের ঘাড়ে ঋণের বোঝা প্রায় ২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
রাসিকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) কাছে প্রায় ২০ কোটি টাকা পাবেন অন্তত ৬০ জন ঠিকাদার। গত সাড়ে চার বছরে তাদের এই টাকা বকেয়া পড়েছে। কয়েকদিন আগে বকেয়া টাকা চাইতে নগর ভবনে গিয়েছিলেন কয়েকজন ঠিকাদার। কিন্তু বকেয়া টাকা পরিশোধে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে রাসিক। অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলে দেউলিয়া। এ নিয়ে পাওনাদার ঠিকাদারদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার জানান, রাসিকে ৪০ লাখ টাকার একটি কাজ করেছিলেন। সেই টাকার মধ্যে পেয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। কয়েক দফায় তাঁকে এ ২৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বকেয়া ১৫ লাখ টাকার জন্য প্রায় তিন বছর ধরে ঘুরছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘থোক বরাদ্দের অর্থ থেকে বাকিতে কাজ করে নেয়। এই কাজ পাওয়ার জন্য একটা অংশ কমিশন দিতে হয়। আবার কাজ শেষেও দিতে হয় কমিশন। কিন্তু বিল পেতে ঘুরতে হচ্ছে বছরের পর বছর। তার পরও টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে। গত সাড়ে চার বছরে অর্থ লোপাট হওয়ার কারণে রাসিক ফের ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন এই ঠিকাদার।
রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, ‘প্রায় ২০ কোটি টাকা ঠিকাদারদের পাওনা আছে। চলতি বছরে সরকারি সাত কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে কিছু পরিশোধ করা হবে বলে জানান তিনি।
রাসিকের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘তিনি দ্বায়িত্ব নেয়ার পর সরকারি বরাদ্দ কম এসেছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন তিনি নগর ভবনের বাহিরে ছিলেন। এসব কারণে রাসিক ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। টাকা পেলে ঠিকাদারদের পাওনা পরিশোধ করা হবে বলে দাবি করেন তিনি।
রাসিক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে সরকার থেকে ১৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পেয়েছিল সিটি করপোরেশন। গত বছর পেয়েছে ১২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জন্য সাত কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে চিঠি এসেছে।
সূত্রমতে, প্রায় ২০ কোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে সম্প্রতি সিটি করপোরেশন পাঁচ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরো ১২ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করবে। সব মিলিয়ে সড়ক উন্নয়নের জন্য ১৭ কোটি টাকার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বরাদ্দ এসেছে সাত কোটি টাকা। নতুন করে সরকারি অর্থ বরাদ্দ না আসলে ঋণের বোঝা গিয়ে দাঁড়াবে ৩০ কোটিতে।