বিচারকদের চাকরিবিধি: আরও ৩ দিন সময় পেল সরকার
অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট প্রকাশে আরও তিন দিন সময় দিয়েছে আপিল বিভাগ। রোববার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরও সময় চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ তা মঞ্জুর করে বুধবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে। শুনানিতে দাঁড়িয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, হয়ে যাচ্ছে, কাজ চলছে। পরে আদালত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়। আদালত শীতকালীন অবকাশে যাওয়ার আগে ১৩ ডিসেম্বরই শেষ কর্মদিবস। নতুন ববছরের ১ জানুয়ারি আদালত খুলবে। এর আগে গত রোববার আপিল বিভাগ ওই গেজেট প্রকাশের জন্য ১০ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয় তার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আপিল বিভাগে আসে। ওইদিন জেনারেল মাহবুবে আলম আবারো সময় আবেদন করলে তা মঞ্জুর করে নতুন দিন দেয় আদালত। এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, শৃঙ্খলাবিধির খসড়া চূড়ান্ত করে সুপ্রিম কোর্টকে দেখিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে সেখান থেকে ফেরত এলেই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। সরকারের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেয়া হয়েছিল গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি সিনহা। শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ে পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। এর আগে গত ৫ নভেম্বরে গেজেট প্রকাশে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় আপিল বিভাগ। প্রায় দেড় বছর ধরে অধস্তন আদালতে চাকরিবিধি-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ নিয়ে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। এর মধ্যে কয়েকবার সময় দেয়ার পরও সরকার গেজেট প্রকাশ না করায় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলবও করে আপিল বিভাগ। মামলার বিবরণ: গত ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা সংক্রান্ত মাসদার হোসেন বনাম সরকার মামলার যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে জুডিসিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালা এখনও প্রণীত হয়নি। এ নিয়েই সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপড়েন চলছে।