কি খাচ্ছে কাপাসিয়াবাসী বর্জ্য অপসারণ শুরু প্রসাশনের সহযোগিতা চায় ইজারাদার
কাপাসিয়া(গাজীপুর)প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কাঁচা বাজার সংলগ্ন শীতলক্ষা নদীর তীর থেকে বর্জ্য অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে প্রসাশনের সহযোগিতা চায় বাজার ইজারাদার। ১৩ ডিসেম্বর বুধবার দুপুর ১২টায় বাজার ইজারাদারের নির্দেশে ৫ জন সুইপার এ কাজ শুরু করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শীতলক্ষার বানার নদী বেষ্টিত কাপাসিয়া বাজারে প্রায় তিন হাজার দোকান। কাপাসিয়া বাজারে কাঁচা বাজার ও পান বাজার সংলগ্ন নদীর তীরে বিশাল আকৃতির ময়লার বাগাড়। প্রাত্যাহিক বর্জ্যের কারণে উপজেলা প্রসাশন, শিক্ষা অফিস, থানা, রেজিষ্ট্রি অফিস, ব্যাংক বীমা, এনজিও অফিস, বেসরকারি ক্লিনিক, হোটেল রেস্তোরায় মানুষের নিত্য নৈমত্তিক কাজে আসা প্রায় বিশ হাজার মানুষ খুবই অসুবিধায় পড়ছেন। ময়লার বাগাড় থেকে ৫০০ গজ দূরবর্তী কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কাপাসিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। কোয়াটার কিলোমিটার দূরে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহি কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ। নদীর তীরে ময়লার স্তূপ এর ঠিক উল্টো দিকে রয়েছে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
কাঁচা বাজার চা দোকনাদার নজরুল ইসলাম শেখ জানান, দুর্গন্ধের কারণে আমার দোকানে মানুষ চা পান করতে আসে না। আমিও বিপাকে আছি। সবজি দোকানদার আমিনূল ইসলাম জানান, কোনো মানুষ আসছেনা আমার দোকানে। পেটের দায়ে আমি কাজ করি। পিঠা দোকানদার বাসির উদ্দিন বলেন, এসব ময়লা পরিস্কার হউক। মশা মাছি এসে পিঠায় বসে তাতে মানুষ আমার সাথে রাগ করে। ময়লা এখান থেকে অন্য জায়গায় নিলে খুব ভালো হয়। আলু ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ী পরিমল সরকার বলেন, নদীর পানি নষ্ট হচ্ছে। নদীর পানি আগে খাওয়া যেত এখন আমরা হাতমুখও ধূতে পারিনা।
পাবলিক টয়লেট ইজারাদার তপু বর্মণ বলেন, বর্জ্য থাকার কারণে মানুষ এখানে টয়লেট করতে আসেনা। বর্জ্যের উপর মানুষ যত্রতত্র বসে টয়লেট করছে। আমি আর্থিক ভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্থ। তিনি আরও বলেন, এখানে পাবলিক টয়লেটে বাজার ব্যবসায়ীসহ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে। পাশেই বর্জ্যের দুর্গন্ধ। একটি টিউবওয়েল ছাড়া পানির ব্যবস্থা নেই। এখানে নদী থেকে পানি উঠানো ব্যবস্থা থাকলে অথবা একটি গভীর নলকূপ হলে ভালো হতো।
এর আগে বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে কাপাসিয়া বাসীকে সচেতনতা বাড়াতে গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন কাপাসিয়া ইউনিট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কাপাসিয়া শাখা, বাংলাদেশ ডেন্টাল এসোসিয়েশন কাপাসিয়া শাখা একাধিকবার মানববন্ধন করেছে।
শীতলক্ষ্যা নদীতে বাজারের ময়লা ফেলায় নদীর পানি দূষণ, পার্শ্ববর্তী খেয়াঘাট চলাচলে অসুবিধা, আশপাশের কাঁচা তরকারির বাজার ও হোটেল গুলোতে জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পান বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানায়, এখানে ময়লার উপর বসেই কাজ করতে হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ময়লার দুর্গন্ধের মাঝে বসে কাজ করি। এই নদীর পানি ব্যবহার তো দূরের কথা ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। নদীর পানি এমনই দূষিত হচ্ছে যে নদী থেকে সরপুঁটি, চাপিলা, ভাঙনা, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু মাছ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া এলাকার নলকূপের পানিও খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিন দিন এলাকার মানুষের মধ্যে চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
কাপসিয়া বাজার ইজারাদার আবদুর রউফ প্রধান বলেন, আমার নিজ উদ্যোগে ময়লা অপসারণ শুরু করেছি। আমি চাইনা এখানে ময়লা থাকুক। আমাকে গাড়ী দিলে পাশ^বর্তী সূর্যনারায়নপুর নির্ধারিত স্থানে ময়লা স্থানান্তরের কাজ করতে সুবিধা হবে। এ ব্যাপারে আমি প্রসাশনের সহযোগিতা চাই।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আবদুস সালাম সরকার বলেন, কাঁচা বাজার সংলগ্ন স্থানে বর্জ্য অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন হয়েছে। এসব বর্জ্যের কারণে মানুষ পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ডায়ারিয়া ও চর্মরোগ প্রকোপ আকার ধারণ করতে পারে। এখানে বর্জ্যের উপর টিউবওয়েলটি সিল করে দেওয়া দরকার।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাকছুদুল ইসলাম বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এজেন্ডা নিয়ে উপজেলা পরিষদ সাধারণ সভায় আলোচনা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিব।