শনিবার মহান বিজয় দিবস
আগামীকাল (শনিবার) ১৬ ডিসেম্বর— মহান বিজয় দিবস। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবের দিন। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গার এমন অনন্য ইতিহাস আর কোনো জাতির নেই।
ঢাকায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে এ দিনেই হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সেনা-শিরোমণি জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন, অস্ত্র সমর্পণ করে তার অনুগত সেনারা।
পরাজয় মানতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। যাত্রা শুরু হয় মুক্ত-স্বাধীন লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশের। কাল প্রবাহে কেটে গেছে ৪৬ বছর।
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পূর্ব আকাশে যে সূর্যটি উদিত হয়েছিল তা ছিল বাংলাদেশের। বাঙালি জাতির বিজয়ের সূর্য। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণায় ২৬ মার্চ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন আর যুদ্ধের ডাক। এ ভূখণ্ডকে শ্বাপদ-সংকুল করে তুলেছিল যে হানাদার পাকিস্তানিরা, তাদের বিতারিত করতেই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতি।
১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ে সেই যুদ্ধে চিরশত্রুকে পরাজিত করার গৌরব। হাজার বছরের শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি। পদ্মা-মেঘনা-ব্রম্মপুত্র-যমুনাবাহিত বাংলা ব-দ্বীপের ৪ হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবের-অহঙ্কারের দিন আমাদের বিজয় দিবস।
অন্ধকার থেকে আলোর পথের সফল অভিযাত্রী, এ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মুক্তিকামী মানুষ, সেদিন প্রমাণ করেছিল, পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির চেতনা, প্রবল দেশপ্রেম আর সাহসের কাছে পরাক্রমশালী কোনো সশস্ত্রবাহিনীই কিছু নয়।
আর এমন অর্জনের পেছনের ইতিহাস মোটেই সুখকর ছিল না। শান্তিপ্রিয় ও নিরীহ মানুষের এই জনপদ কখনো মুঘল, কখনো পাঠান, আবার কখনো ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীন। ১৯৪৭-এ ব্রিটিশের কবলমুক্ত হয়েও, ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের শাসক শ্রেণীর শোষণ নিপীড়নের শিকার হয় বাঙালি। শুরু হয় দীর্ঘ সংগ্রাম।
প্রথমে ভাষার দাবিতে, তারপর স্বাধিকার, ধীরে ধীরে স্বাধীনতার আন্দোলন ও সবশেষ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে চুড়ান্ত মুক্তি সংগ্রামে এক সাগর রক্ত ঢেলে দেয় বীর বাঙালি। একাত্তরে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বাঙালির কাছে নত হয় পাকিস্তানিরা।
বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। এক আওয়াজ.'জয় বাংলা'। সবার মাঝে বিজয়ের হাসি আর আনন্দাশ্রু। জনস্রোত ছুটছে এক গন্তব্যে— ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে। যেখান থেকেই নয় মাস আগে জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব উচ্চারণ করেছিলেন মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সেই অঙ্গীকার।
রক্ত দিয়ে কেনা সেই মুক্তি, সেই স্বাধীনতা, পল্লবিত হলো রেসকোর্স ময়দানে। আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করলেন পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি। দেশময় ছড়িয়ে পড়লো বিজয়ের আনন্দ। আর এ বিজয়ই সারা বিশ্বে অনন্য।
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মুক্তিপাগল বাঙালির স্পৃহা একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণতা পায়, তা অবিনশ্বর রাখার দায়িত্বও লাল -সবুজের দেশের প্রতিটি নাগরিকের। এর সঙ্গে মিশে আছে মাতৃভূমির মুক্তি, দেশের জন্ম-ইতিহাস। সে চেতনাতেই উজ্জীবিত হতে হবে বারবার।