লালমনিরহাটের আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম হাসপাতলে দুই দশক ধরে বন্ধ অন্তঃ বিভাগ ও জরুরী বিভাগ
আসাদুজ্জামান সাজু, লালমিিনরহাট :
লালমনিরহাটের আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম এলাকাটি নিয়ে দেশে নানা ভাবে আলোচনা রয়েছে। জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত ওই এলাকাটিতে প্রায় ২০ হাজার লোকজনের বসবাস। এখানে সরকারি স্কুল থেকে শুরু করে সব সুযোগ-সুবিধা আছে। রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে একটি আধুনিক সুবিধা সংবলিত হাসপাতালও। আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম প্রবেশ করতে যেমন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র নজরদারির পাশাপাশি কাঁটাতারের গেট পাড় হতে হয়। তেমনি প্রবেশের পরে মনে হয় যেন মূল ভূখণ্ড থেকে ছিটকে পড়া ‘আরও এক টুকরো বাংলাদেশের’ কথা। কিন্তু ওই এলাকার লোকজনের স্বাস্থ্য সেবার জন্য সরকারি হাসপাতালটির অন্তঃ বিভাগ ও জরুরী বিভাগ দীর্ঘ দুই দশকেও চালু করা সম্ভব হয়নি।
গত ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সফরে এসে হাসপাতালের অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগ উদ্বোধন করেন। ফলে ওই সময় চিকিৎসা সেবা নিয়ে এলাকার লোকজনের মনে আশা জেগেছিল। তবে মাত্র ৩ মাস চালু থাকার পর সেই অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগ সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হচ্ছে।
জানা যায়, ভারতীয় তিন বিঘা করিডোর হয়েই মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যাতায়াত করতে হয় দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা এলাকার বাসিন্দাদের। ১৯৯৬ সালে দহগ্রামের বঙ্গেরবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ১০ শয্যার একটি সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। ওই সময় ৪ চিকিৎসক, ৪ সেবিকাসহ মোট ২৫ জন লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে, ঠিক ততই যেন হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এ হাসপাতালে দু’জন চিকিৎসক, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, দু’জন ওয়ার্ড বয়, দু’জন বাবুর্চি ও একজন সুইপারসহ ১০ জন কর্মী রয়েছে। বাকি ১৫টি পদ শূন্যই রয়ে গেছে।
সূত্র মতে, দহগ্রাম হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবার জন্য অস্ত্রোপচার থিয়েটার (ওটি), আধুনিক এক্সরে মেশিন, উন্নত যন্ত্রপাতি, মহিলা-পুরুষ ওয়াডের পাশাপাশি অস্ত্রোপচার করা রোগীদের রাখার বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর মেশিন, অ্যাম্বুলেন্সসহ নানারকম সুবিধা।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য মতে, অন্তঃবিভাগের রোগীদের জন্য যে ১০টি বেড রাখা হয়েছে, তা শুধু দেশের অত্যাধুনিক হাসপাতালেই ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এসব ব্যবহার হচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তার আবার চালক নেই। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ার কারণে হাসপাতালের কোটি টাকা মূল্যের এক্স-রে মেশিন, জেনারেটর, অস্ত্রোপচার থিয়েটারের (ওটি) সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র এখন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এদিকে দহগ্রাম ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দার চিকিৎসার জন্য কাগজে-কলমে ৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু ওই চারজনের মধ্যে দু’জন চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে।
দহগ্রামের স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, হাসপাতালটির শুরু থেকে অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগ বন্ধ রয়েছে। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রামে সফরে এসে অন্তঃবিভাগ উদ্বোধন করেন। তখন থেকে বেশ ভালোই চলছিল হাসপাতালটি। কিন্তু মাত্র তিন মাস পরে সেই অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগের সেবা বন্ধ হয়ে গেলে ফের দুর্ভোগে পরে এ এলাকার লোকজন।
ওই হাসপাতালে চিকিৎসক ডা ঃ নুর আরিফ প্রধান জানান, বর্তমানে শুধু হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। তবে অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগ বন্ধ থাকায় তাদের কেউ ভর্তি হতে পারছেন না।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাসনাত ইউসুফ জানান, দহগ্রাম হাসপাতালের অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগ চালুর বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে রয়েছে। তবে ওই হাসপাতালের যে দু’জন ডাক্তার বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত রয়েছে, তাদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ জেলা সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে ।