জাতীয় জাদুঘরে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান’র বিশেষ প্রদর্শনী সম্পন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত কীর্তিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খান’র একক ‘জোড়াতালির চালচিত্র’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনীর অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকাল ৫টায় কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। আরো উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, শিল্পী রফিকুন নবী এবং বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বিখ্যাত অভিনেতা আফজাল হোসেন।
চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীর তীরে সবুজ শ্যামল 'শেখদী' গ্রামে পিতা মো. ইউসুফ খান ও মাতা নূরুন্নেসা বেগম’র ঘরে ১৯৪২ সালের ১৬ এপ্রিল, বাংলা ১৩৪৮ এর ৩ বৈশাখ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন দেশবরেণ্য শিল্পী হাশেম খান। তিঁনি ১৯৫৬ সালে গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস এন্ড ক্রাফটস (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এ প্রথম শ্রেণিতে পাঁচ বছরের শিক্ষা কোর্স সমাপ্ত করেন। ১৯৬১-১৯৬৩ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটে মৃৎশিল্প বিষয়ে রিসার্স স্কলার।
১৯৫৬ সাল থেকেই নিয়মিত ছবি আঁকছেন এই প্রখ্যাত শিল্পী এবং দেশে বিদেশে প্রায় ৫০টি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। 'নবান্ন' উৎসব, বসন্ত উৎসব, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বাংলা নববর্ষ ইত্যাদি উৎসবের প্রথম প্রবর্তন ও প্রতিষ্ঠার অন্যতম নেতা, ৬৯ এর গণ-আন্দোলনে চারুশিল্পীদের সক্রিয়ভাবে যোগদানের অন্যতম সংগঠক এবং ঢাকায় থেকেই ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত ছিলেন। শত্রু দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েও আহত অবস্থায় ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যান এই শিল্পী।
স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক জনাব ফয়জুল লতিফ চৌধুরী চিত্রশিল্পী হাশেম খান কে তিনি ভাস্কর্যের নতুন ভূবনে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, হাশেম খান আশ্চর্য সব ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। কাঠ ও সাধারণ কিছু কাঁচামাল ব্যবহার করে এসব ভাস্কর্য তিনি তৈরি করেছেন।
বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, শিল্পকলার এমন কোন মাধ্যম নেই যা নিয়ে হাশেম খান কাজ করেননি। ডিগ্রী তাঁর মৃৎশিল্পে অথচ পরিচিতি চিত্রশিল্পী হিসেবে। এখন কাজ করছেন ভাস্কর্যের উপর। দিন দিন তাঁর কাজে অবাক হতে হচ্ছে কারণ দিন দিন তাঁর কাজের পরিধি বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন বহুদিন পর একটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে এবং জাদুঘরের এই আয়োজনের জন্য জাদুঘরকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, দীর্ঘদিন শিল্পী হাশেম খানের সান্নিধ্য পাওয়ায় আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন শিল্পী হাশেম খান। একেবারে অন্যরকম এক প্রদর্শনী আজকের এই প্রদর্শনী। এই কাজে যেমন মুর্যালের সকল উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে তেমনি গৃহে ব্যবহার করার উপযোগী করেও তৈরি করা হয়েছে এসব শিল্পকর্ম।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ৬১ বছরের পুরনো সম্পর্ক শিল্পীর সাথে আমার। অসাধারণ সকল ভাস্কর্য তৈরি করেছেন এই শিল্পী। তিনি বলেন তিনি মনে করতেন শিল্পী হাশেম খানের কাজের একটি পরিবর্তনের দরকার ছিল এবং 'জোড়াতালির চালচিত্র' প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেই পরিবর্তন তিনি দেখতে পেয়েছেন। তিনি আরো বলেন শিল্পী বহু মমতা ও নৈপুণ্যতার সাথে তিনি এই প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলো তৈরি করেছেন।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন শিল্পী হাশেম খান। শিল্পী ছাড়াও মানুষ তাকে পেয়েছে এখন মহান হৃদয়ের অধিকারী এক মানুষের রূপে। তিনি সর্বদা মানুষের কল্যাণের চেষ্টা করেছেন। মানুষ যে বয়সে অবসরের চিন্তা করেন শিল্পী তখন নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন মানুষের সামনে। তাঁর যে প্রদর্শনী হচ্ছে- এটির নাম ‘জোড়াতালির চালচিত্র’। হাশেম খানের এই মাধ্যমটি নতুন হলেও, আমার দৃঢ় বিশ্বাস জোড়াতালিতেও হাশেম খান সফল শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, তাঁর চিত্রকর্মের মধ্যদিয়ে শিল্পীর প্রতিবাদ তুলে ধরেছেন হাশেম খান। খুব কম মানুষই আছেন যারা একসাথে একুশে ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। সল্প সংখ্যক যেকজন মানুষ এই পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পী হাশেম খান তাদের একজন। স্বাধীনতার চেতনা ও চর্চা নিয়ে কাজ করেন শিল্পী হাশেম খান। মানুষ হিসেবেও তিনি সহজ সরল ও মিতভাষী। এই শিল্পীর প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন বলে জানান।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, শিল্পী হাশেম খান একজন বিশ্বমানের শিল্পী। এদেশে বসে এই শিল্পীর কাজের মান ও পরিমাপ করা আমাদের দুঃসাধ্য। শিল্পী হাশেম খানের তুলনা তিনি নিজেই। তাঁর কাজের জন্য সর্বদা এদেশ গৌরববোধ করবে। বাংলাদেশে এখন যে সকল শিল্পী কাজ করছেন তাদের মধ্যে শিল্পী হাশেম খান অন্যতম। শিল্পকর্ম মারা যায় না আমাদের মাঝে এই বোধ সৃষ্টি করেছেন শিল্পী। কাঠের মধ্যে যে কত ভালবাসা আছে তা তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন। এই কাঠের শিল্পকর্মের মাঝে পেইন্টিং- এর গুণাগুণ ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন ভাষণে শিল্পীপতœী মিসেস পারভীন হাশেম খান বলেন, এই প্রদর্শনী আয়োজনের যাবতীয় কাজে সর্বদা সহায়তা করার জন্য জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফসহ জাদুঘরের সকলকে তিনি ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও তিনি ধন্যবাদ জানান এই প্রদর্শনীর সাথে জড়িত সকল মানুষকে। তিনি আরো ধন্যবাদ জানান উপস্থিত সকল দর্শক ও অতিথিদের এবং বিশেষ এই শিল্পকলা প্রদর্শনীতে আসার জন্য সকল কে অনুরোধ জানান।