রাজধানীর উত্তর অংশ অচল, তাবলিগ অনুসারীদের বিক্ষোভ
মো.রবিউল ইসলাম।।
বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে বাংলাদেশে আসা ঠেকাতে বিমানবন্দর এলাকায় বিভিন্ন তবলিগ জামাতের অনুসারীদের বিক্ষোভের কারণে যানজটে অচল হয়ে পড়েছে উত্তরা এলাকা। বিমানবন্দর মোড়ের দুই দিকেই যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে মানুষকে।
উত্তরা থেকে ঢাকামুখী যানবাহন যেমন আসতে পারছে না, তেমনি বনানী থেকে উত্তরার দিকেও যেতে পারছে না গাড়ি। এতে দুই দিকের সড়কেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে লাখো মানুষ।
পুলিশ জানায়, এবারের ইজতেমায় মাওলানা সাদের অংশগ্রহণ নিয়ে তবলিগ জামাতের মধ্যে বিরোধ ছিল। সম্প্রতি টঙ্গীতে ইজতেমার প্রস্তুতি সভায় এই বিষয়টি প্রকাশ পায়। তবে বিরোধিতার মধ্যেও মাওলানা সাদের আজ বুধবার সকালে ঢাকায় আসার কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল।
কিন্তু সকাল থেকে সাদবিরোধীরা বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ জানাতে থাকে। আর এক পর্যায়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় পুরোপুরি। মুল সড়কের পাশাপাশি বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসাতেও বিক্ষোভ করতে থাকে ছাত্র-শিক্ষকরা।
বিমানবন্দর মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নেয়ায় ঢাকামুখী গাড়ির সারি বিমানবন্দর মোড় থকে টঙ্গী পেরিয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে অনেক দূর ছড়িয়ে যায়। যারা জরুরি কাজে ঢাকায় আসছেন, তারা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরের সড়ক ধরে আগানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মূল সড়কে গাড়ি বন্ধ থাকায় ভেতরের সড়কে ঢুকে পড়া গাড়িগুলো ওই সড়কগুলোর বন্ধ করে দেয়। ফলে যানজট প্রধান সড়ক ছাড়িয়ে অলিতে-গলিতে পৌঁছে যায়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে আরিফ হোসেনের অফিস বনানী। থাকেন টঙ্গীতে। অফিসে জরুরি বৈঠক ছিল বেলা ১১টায়। বাসে চড়েন সকাল ১০টার দিকে। কিন্তু উত্তরার হাউজ বিল্ডিংয়ের পর গাড়ি আর আগায় না। পরে বাস থেকে নেমে হেঁটে রওয়ানা হন। বেলা ১২টার দিকে জসীমউদ্দিন মোড়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
আরিফ বলেন, ‘আমি জানতাম না কী ঘটনা। পরে সব জানতে পারলাম। ধর্ম নিয়ে এই ধরনের বাড়াবাড়ি কাম্য নয়। তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে আলাপ আলোচনা করে সমাধান করা উচিত। কিন্তু এভাবে সড়কে অবস্থান নিয়ে আমাদের কষ্ট দেয়ার মানে কী?’।
আরেক যাত্রী লোপা আবেদিনের কাহিনিও একই রকম। তিনিও গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওয়ানা হতে বাধ্য হয়েছেন। লোপা বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে এই ধরনের কাজ চলছে এটাকে নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আবেগ আছে, সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষকে কষ্ট দেয়ার কী মানে।’
আবার বিমানবন্দর মোড় থেকে উত্তরার দিকেও তীব্র যানজট দেখা গেছে। বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।
তবে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সদস্যদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। কেন তারা নির্লিপ্ত, সে বিষয়ে গণমাধ্যমকে কিছু বলতেও রাজি নন তারা। জানতে চাইলে একজন পুলিশ সদস্য বলেছেন, ‘আপনারা ওপরে কথা বলেন। এ নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।’
পরে আরেকজন পুলিশ সদস্যও একই কথা বলেন।
জানতে চাইলে উত্তরা ট্রাফিক জোনের একজন সহকারী কমিশনার বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির মওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে তবলিগ জামাতের সমর্থকরা বিক্ষোভ করছে। তাদেরকে সরানোর দায়িত্ব আমাদের না। এটা পুলিশের অপরাধ বিভাগ করবে।’
এদিকে পুলিশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আছেন। একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও এ বিষয়ে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।