ঘন কুয়াশা:বাড়ছে শীতের তীব্রতা,শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত যশোর সহ শার্শা,বেনাপোলে জনজীবন
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি।।ঘন কুয়াশা বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যশোরের শার্শাসহ বেনাপোলের জনজীবন। গত কয়েক দিনের কনকনে শীতে জব থব হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। গত পঁ।চ দিনে যশোরের তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। শুক্রবার তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, খুলনা বিভাগ জুড়ে এখন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আরও কয়েকদিন এই অবস্থা থাকতে পারে। কেউ কেউ বলছে ৫০ বছর বছর পর এবার পৌষের মাঝামাঝিতে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।
দিনে কোন রকম সূর্যের আলো দেখা গেলেও সূর্য ডোবার সাথে সাথে প্রচন্ড ঠান্ডা ও উত্তরে বাতাস বইতে শুরু করেছে। শীতের তীব্রতায় দিনের বেলাতেও শহরে জনসমাগম যেমন কমে গেছে, তেমনি সন্ধ্যার পরপরই একটু দূরের হাটবাজারগুলো একেবারেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড শীতের কারণে বেনাপোল বন্দরে পণ্য উঠানামায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। বেনাপোল থেকে দুরপাল্লার বাসগুলো নির্দিস্ট সময়ের কয়েক ঘন্টা পর এখানে আসছে ও এখান থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতি দিন দুপুরের পর পরই ঘন কুয়াশায় চারিদিকে ঢেকে যাচ্ছে। শহরে শীতের প্রকট কম হলেও উপজেলার গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাট-বাজারে লোকজনের উপস্থিতি খুবই কম দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
এদিকে কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় শীতের দাপট কমেনি। তীব্র শীতের কারণে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। খুব সকালে মাঠে প্রতিদিনের মতো চাষিদের দেখা মিলছে না। বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোকে। হাড় কাঁপানো শীতে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন। বেনাপোল রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও বস্তিবাসীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। পুরাতন কাপড়ের দোকানে প্রচুর ভিড় জমে উঠেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। দামও বেশি নিচ্ছে দোকানদাররা। গ্রাম-শহর সর্বত্রই উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় শীতবস্ত্রের কাপড়ের দোকানগুলোতে।
এলকার চাষীরা জানান, প্রতিদিন তারা দলবদ্ধ হয়ে ভোরে মাঠে ধানের পাতা লাগাতে যান। কিন্তু গত কয়েকদিনের প্রচন্ড শীতের কারণে বেলা ১২টার দিকে মাঠে যাচ্ছি। তাতেও কাঁপন ধরছে।
বেনাপোল বন্দরের সামনে ফুটপাতে গায়ে মোটা চট জড়িয়ে শুয়ে থাকা বৃদ্ধ শাহাজান আলী বলেন, ‘শিতির বাতাসে হাড় কাঁপায়ে যাচ্ছে। মুটা বস্তায় গায় দিয়েও শিতিতে বাঁচতিচিনে। এইরাম আর কয়দিন যাবে? বেশি দিন গেলি বাঁচপোনানে!’
দুর্ভোগে পড়েছে শিশু শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও উপস্থিতির হার কমেছে। তীব্র শীতে শিশুরা নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শিশু রোগীর ভিড় বাড়ছে। গত ১০/১২ দিনে নাভারন স্বাস্থ্য রকেন্দ্র ও বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রায় শতাধিক শিশু ভর্তি হয়েছে। সকলেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃদ্ধরাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে তারা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অশোক কুমার সাহা।