রোহিঙ্গারা ফিরবে ২ বছরে প্রত্যাবাসন চুক্তি চূড়ান্ত
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামের মাঠপর্যায়ের চুক্তিটি মঙ্গলবার চূড়ান্ত হয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দুই বছরের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে বলে চুক্তিতে দু'পক্ষই সম্মত হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে চুক্তিটি চূড়ান্ত রূপ পেল।
এর আগে বিষয়টি নিয়ে সোমবার টানা ১৩ ঘণ্টা বৈঠক হয়। তবে বেশ কয়েকটি মৌলিক বিষয় অমীমাংসিত থাকায় সোমবার চুক্তিটি চূড়ান্ত করা যায়নি। সন্ধ্যায় অনিষ্পন্ন এসব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়।
এরপর মঙ্গলবার সকালে পুনরায় বৈঠক হয় এবং সেখানেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এর ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সরকারি পর্যায়ের কাজটি সম্পন্ন হলো।
বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ও মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট থো বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।
পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা সফলভাবে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত করে ফেলেছি। সেইসঙ্গে যেসব রোহিঙ্গা ফেরত যাবেন— তাদের জন্য একটি ফরমের রূপও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই চুক্তিতে প্রত্যাবাসনের সংখ্যাসহ অন্য যেসব বিষয় আছে সেগুলোর উল্লেখ আছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার ভূমিকার বিষয়টি এখানে যুক্ত করা হয়েছে। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রত্যাবাসনের পর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জীবন-জীবিকার বিষয় নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় দেয়া হলেও শুরু থেকেই বাংলাদেশের দাবি ছিলো, নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে হবে মিয়ানমারের নাগরিকদের।
নানা কূটনৈতিক চাপের পর গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দু'দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সমঝোতা সই হয়, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। সমঝোতা অনুযায়ী ২ মাসের মধ্যে শুরু করার কথা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রথম ধাপ।
এরপর ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় দু'দেশের মধ্যে গঠন করা হয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। তখন সিদ্ধান্ত হয়, দু'দেশের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের এ কমিটি জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমারে প্রথম বৈঠকটি করবে। সে অনুয়ায়ীই সোমবার বৈঠক শুরু হয়।