প্রশংসা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের গুমের অভিযোগে উদ্বেগ
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। অন্যদিকে গোপনে আটক, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলোতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটির ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০১৮’-এ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এমন মন্তব্য উঠে এসেছে।
২৮তম সংস্করণের এই প্রতিবেদনটি ৬৪৩ পৃষ্ঠার। যেখানে ৯০ টিরও বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে সংস্থাটি।
বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবাধিকার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনটির প্রারম্ভিক প্রবন্ধে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রোথ লিখেছেন, রাজনৈতিক নেতারা মানবাধিকার নীতির স্বপক্ষে থাকতে চায়। আর এতেই প্রমাণ হয় কর্তৃত্ববাদী, সস্তা জনপ্রিয়তার বিষয়গুলো সীমিত করা সম্ভব। সংহত জনগণ এবং সক্রীয় বহুপক্ষীয় ব্যক্তিদের সমন্বিত পরিবেশ এর মাঝে, এই রাজনৈতিক নেতারাই দেখান যে, মানবাধিকারবিরোধী সরকার আসলে অবধারিত নয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদনে তাদের মন্তব্য: গোপনে আটক, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অভিযোগের যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ বাংলাদেশ। আর আইনের এমন অপব্যবহার বারবার ঘটছে। অভিযোগগুলো বরাবরই অস্বীকার করছে কর্তৃপক্ষ।
গত আগস্ট থেকে জাতিগত নিধনের মুখে ৬ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ড, হত্যা সহ মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয় তারা। এর আগে থেকেই কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলো।
এদের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে ২০১৬ এর শেষ দিক থেকে ২০১৭ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত। যদিও অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ, তবে দেশে প্রবেশ করতে দিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোড় করে ফিরিয়ে না দেওয়ার জন্য এবং সীমিত সম্পদ দিয়েও এখন পর্যন্ত যেভাবে তাদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে, তাতে বাংলাদেশ কৃতীত্বের দাবিদার।
“যদিও বসবাসের অযোগ্য দ্বীপে তাদের (রোহিঙ্গাদের) স্থানান্তর চিন্তা বা মূল নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা ছাড়াই রোহিঙ্গাদের বার্মায় ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা এখনও উদ্বেগের বিষয়।”
স্থানীয় মানবাধিকারের কয়েকটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটি বলেছে, দেশটির অনেককে গুমের শিকার হতে হয়েছে। বিরোধী দলীয় সমর্থক ও সন্দেহভাজন জঙ্গি-উভয়কেই টার্গেট করছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
বিশেষায়িত বিভিন্ন বাহিনীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধেও তারা কিছু অভিযোগ তুলেছে।
গণমাধ্যমসহ সুশীল সমাজের বিভিন্ন গ্রুপ রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় ‘এ্যাক্টর’ দ্বারা চাপের সম্মুখিন, বলে মন্তব্য করা হয়। ফেসবুকে সরকার বা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সমালোচনা করে যে অনেককে গ্রেপ্তারের শিকার হতে হয়েছে, তাও উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে সরকারের আনুষ্ঠানিক নীতি থাকলেও এক্ষেত্রে একটি বৈপরিত্যমূলক আইন পাশ হয়েছে।২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাশ করা সেই আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে ১৮ বছরের কম বয়স্ক মেয়ের বিয়ের অনুমোদন দেয়। এই ব্যতিক্রমে বিয়ের নুন্যতম বয়সকে উপেক্ষা করে।
লিঙ্গ ও যৌনতা ভিত্তিক বৈষম্য দূর করতেও সরকার ব্যর্থ বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে। এখানে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার একটি জমায়েতে অভিযান চালিয়ে ২৮ জনকে আটক করার ঘটনা। মে মাসে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) তাদের আটক করেছিলো। আটককৃতদের সমকামি অভিহিত করে গণমাধ্যমের সামনে দিয়েই হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। মাদক রাখার অভিযোগও তোলা হয়েছিলো।
অ্যাডামস বলেন, গত বছরগুলোতে বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ডে শুভ কিছু খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। বিশেষ করে যখন দেশটিতে ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচন হতে চলেছে, এই সময় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ভিন্নমতকে নীরব করার প্রচেষ্টাও বন্ধ করতে হবে।