অবশেষে নিরসনে জয়পুরহাট জেলা আ.লীগর গ্রুপিং সাংগঠনিক সকল দায়িত্ব দিলেন জেলা কমিটিকে ওবায়েদুল কাদের।
জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ নিরেন দাস।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগকে কঠোর বার্তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে জয়পুরহাট জেলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বৈঠকে। বৈঠক সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই দফায় জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়।
প্রথম দফায় জেলা নেতাদের সাথে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৈঠক করেন। এরপর বিকেল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বৈঠক করেন। বৈঠকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম দুদু, এস এম সোলায়মান আলী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ জেলার অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রথম দফার বৈঠকে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন উপস্থিত ছিলেন না।
দ্বিতীয় দফার বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নেত্রীর নির্দেশনা সবাইকে জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুসারে চলতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ কোনো কিছু করলে তা বরদাশত করা হবে না।
এরপর ওবায়দুল কাদের বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত দেন। সিদ্ধান্তের মধ্যে ক্ষেতলাল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ওই কমিটির ১ নং সিনিয়র সহ-সভাপতি তাইফুল তালুকদারকে দায়িত্ব দেন। আর জেলার তিন নেতাকে বহিষ্কারের ব্যাপারে খতিয়ে দেখে তদন্ত করার দায়িত্ব জাহাঙ্গীর কবির নানক ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে দেন। কারণ, এর আগে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ তিন নেতাকে তাদের বাবার বিরুদ্ধ একাত্তরে শান্তি কমিটিতে থাকার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।
আর দলে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশ নিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, দলের উপকারে জামায়াত-বিএনপির চিহ্নিত লোকদের টানার কোনো দরকার নাই। আমি আপনাদের সবার অভিযোগ শুনলাম। বাকিটা দ্বিতীয় দফার বৈঠকে আপনারা জানাবেন।
গত ১৩ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান টিটো স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যেমে বিষয়টি জানানো হয়। তার আগে সেদিন সকাল ১০টায় জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই তিন আওয়ামী লীগ নেতা হলেন- মোহাম্মদ আলী ফকিরের ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল কুদ্দুস ফকির, তার নাতি সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন এবং আজাহার হোসেন তালুকদারের ছেলে আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক। সেদিন ওই তিন নেতাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ পাঠানো হয় বলেও জানা যায়।
এদিকে গত বছরের মার্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কার ও কমিটি বিলুপ্তির ঘটনা বন্ধে জেলা কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ছাড়া কোনো ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা ও জেলা শাখার কমিটি বিলুপ্ত করা যাবে না। অথচ আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ইতিমধ্যে কোনো কোনো জেলা তাদের অধীন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা ও জেলা শাখার কমিটি বিলুপ্ত করছে। কোনো কোনো এলাকায় কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা দলের কেন্দ্রীয় গঠনতন্ত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। যদি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে কাউকে বহিষ্কার করার প্রয়োজন হয়, তাহলে বিষয়টি কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের সাথে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের দ্বন্দ্ব ও প্রকাশ্য বিরোধ চলছিল। তা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন থেকে অচলাবস্থা ও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা নেতাদের ঢাকায় তলব করে বৈঠক আহ্বান করে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কিন্তু সকালে বৈঠক শুরুর আগে সেই চাপা উত্তেজনার জেরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ওই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শিমুল আরেফিনের ওপর ধানমন্ডিতে সভানেত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশের সামনে হামলা চালানো হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কার্যালয় সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠক হলেও জেলার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও আসেন। এজন্য বৈঠক শুরু হলে খালিদ মাহমুদ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ব্যতীত সকলকে বাইরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে হামলার শিকার জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক শিমুল আরেফিন রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার অপরাধ, আমি তাদের সাথে না এসে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে এসেছি। এ কারণে আমার ওপর হামলা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন রাজা রাইজিংবিডিকে বলেন, আমাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি থেকে একটু হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এটা তেমন কোনো ঘটনা নয়।
এদিকে সকালের দিকে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে মারামারি ঘটনার কথা জানতে পেরে কার্যালয়ে আগে থেকে অবস্থান করা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান বলে জানা যায়। তিনি কার্যালয়ের স্টাফদের মারফতে বাইরে মারামারির ব্যাপারে খোঁজ নেন। এরপর ধানমন্ডি থানাকে অবহিত করে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে। ওই সময় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালিদ মাহমুদ বলেন, এরা কারা? সাহস কত, সভানেত্রীর কার্যালয়ে এসে মারামারির করে! এই সাহস কোথায় পায়?
আর দ্বিতীয় দফা বৈঠকের আগে জাহাঙ্গীর কবির নানক মারামারির ঘটনাটি অবহিত হয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে ফোন করে জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের কারা সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে এসে মারামারি করেছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে মারামারির বিষয়টি দুঃখজনক বলে স্বীকার করেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কাজটি ভালো করেনি। এ ব্যাপারে অবশ্যই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী মারামারির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বৈঠকে ওবায়দুল কাদের ভাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সবাইকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সবাই ওনার নির্দেশনা মেনে কাজ করার অঙ্গীকর করেছি।