ভূমি প্রশাসনের সমঝোতায় রামগোপালপুর নয়নের খাল আবার দখলের মহোৎসব চলছে!
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি:
ভূমি প্রশাসনের সমঝোতায় রামগোপালপুর নয়নের খাল আবার দখলের মহোৎসব চলছে! এমনটি দেখা গেছে পরিদর্শণকালে। সোমবার সকাল ১০টায় সাংবাদিকদের একটি টিম নয়নের খাল দখলের দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে দখলের মহোৎসব পরিলক্ষিত হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানা ঐতিহ্যবাহি নয়নের খাল নামে পরিচিত দক্ষিণ রামগোপালপুর মিরকাদীম ১নং ওয়ার্ড এলাকায়। এ খালটি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার সংবাদ প্রকাশের কারণে ভূমি দ্যসুরা নিষ্ক্রীয় হয়ে পরেন। এ খাল নিয়ে অনেক প্রশাসনিক কাজ করে যান, একটা সময় এসে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের সহযোগিতায় স্থবির হয়ে পরে এবং ভূমি দ্যসুদের কাজ আবার চলমান হয়ে যায়। ভূমি অফিসের কর্মকান্ড এতই নিখুঁত যে কখনো বলা যায় না যে, কোন কাগজ নকল আর কোন কাগজ আসল। অভিযোগ আছে খাস খতিয়ানের জায়গাও নামে বেনামে রেকর্ডে উঠে আছে। নয়নের খালে বড় বড় পালতোলা নৌকা চলত। নয়নের খাল দিয়ে দক্ষিণ দিকে মুন্সীগঞ্জ কাটাখালি হয়ে পদ্মা নদীতে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।
প্রাচীনতম নয়নের খাল অনুসন্ধানে গেলে মৌজা রামগোপালপুর, জে.এল নং ৩৪, খতিয়ান নং ৫৩৭, ৬৩৫ (আর এস) দাগ নং ২৪০, (আর এস) মোট পরিমান ৪.৫০ শতাংশে বহুতল ভবণ নির্মাণে অনুমতি নেওয়ার কাজও প্রায় সম্পন্ন করছে মিরকাদীম পৌরসভা। উক্ত ভূমিটি দাবীদার মো: বাচ্চু মিয়া (৫৩), পিতা: মৃত: সোনা মিয়া।
বাচ্চু মিয়া জানান, তাহাদের পৈত্রিক সম্পত্তি এটা। নয়নের খাল ছিল সত্য, তবে এটা আমাদের নামের রেকর্ডের সম্পত্তি। এখানে যে খালটি ছিল নয়নের খাল নামে পরিচিত, তাহা ৩৬ ফিট আমাদের জায়গায় পূর্বে ঠিকই আছে, পশ্চিমে সরকারি অধিগ্রহণকৃত জায়গা ঠিকই আছে। এখানে যে কালভার্টটি আছে তাহার নিচ দিয়ে বড় বড় নৌকা ঠিকই যেতো কিন্তু আমাদের জায়গা এটি রেকর্ডের।
এ সম্পত্তির অপর দাবীদার মো: উজ্জ্বল, এই ভূমিটি নিয়ে দীর্ঘ ৩৭ বছর মামলা চলে, আমরা এই মামলাতে কোর্টের রায়ও পেয়েছি। উজ্জ্বলকে মামলার বিষয় জিজ্ঞাসা করলে সম্পত্তির দাবীদার মো: বাচ্চু মিয়ার ইশারায় কোনো উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান উজ্জ্বল। এমন পরিস্থিতে বুঝাযায় আসলেই নয়নের খাল দখলের আবার পায়তারা চলছে। খাল দখলে তারা মেতে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: ফটিক মিয়া (৮০) জানান, এ খালের জন্ম কবে? আমি জানিনা। এ খালের খর¯্রােত ছিল প্রচুর; এ খালের অনেক স্মৃতি আমার মনে আছে। ২শত, ৩শত মনি নৌকা চলত এই নয়নের খাল দিয়ে। নয়নের খালে নি¤েœাক্ত জায়গায় বেশাল জাল দিয়ে প্রচুর মাছ ধরতাম। যাহা এখনো মনে পড়ে। একটার পিছনে পিছনে ছোট ছোট লঞ্চ ঢাকা অঞ্চল থেকে ফরিদপুর অঞ্চলে যেত। আজ এ খালটি কেমন করে জানি সরকারি লোকদের সহযোগিতায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। আমারা আমাদের পুরোনো ইতিহাসকে খুব সহজে ভুলতে পারি, যেমন প্রশাসনের কাছে যদি বলি রাজা বল্লাল সেনের বাড়ি কোথায়? কেউ উত্তর দিতে পারবে না; এটা আমার বিশ্বাস। কারন বল্লাল সেনের সমস্ত বাড়ি ভিটা দখল হয়ে যায় বল্লাল সেনের সাথে বাবা আদম শহীদের যুদ্ধে জয় হয়েও পরাস্থ হওয়ার পর।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, টাকা হলে বাংলাদেশে কি না হয়? যদি বাচ্চু মিয়ার জাগয়া সঠিক হয়ে থাকে তবে কেন তারা মামলার বিবরণ বলছেনা। নয়নের খাল দখলের জন্য যে যার মতো করে চলছে। রাজনৈতিক নেতাদের ও ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগ সাজশে ভূমি দখলের মহাযজ্ঞ চলছে এখানে। নাম জারি এবং খতিয়ানে অন্তর্ভূক্ত করার বিষয়ে ভূমি অফিসের কারসাজি রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। কখনই জনগনের ও সরকারের চিন্তা করেনা অসাধু কর্তাব্যক্তিগণ। মিরকাদিম পৌরসভা ভূমি অফিস সহকারী কর্মকর্তা মো: ইব্রাহিম জানান, আমরা এলাকাটি পরির্দশন করেছি, কাজ বন্ধ করে রেখেছিলাম, তাদের কাগজ পত্র সঠিক তাই কাজ করতেছে আমাদের কোন বাঁধা নাই।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মুনতাসির জাহান জানান, আমি সদর উপজেলার নায়েব সাহেবকে পাঠাচ্ছি বিষয়টি দেখার জন্য। তবে এই গুলো পূরনো খাল কাগজ পত্র না দেখে বলা মুশকিল।
সবুজে সাজাই মুন্সীগঞ্জ কর্মসূচির আওতায় নয়নের খালটি এনে এর উদ্ধার তৎপরতা চালাবেন জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা এমনটিই আশার করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।