রাণীনগরে নানা সম্যসায় জর্জরিত যুগ্নীতলা মন্দির শ্মশান ঘাট
শাহরুখ হোসেন আহাদ, রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর রাণীনগরে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে প্রাচীনতম ঘটাগন যুগ্নীতলা মন্দির ও মহাশ্মশান ঘাট সময়ের বিবর্তনে এখন নানা সম্যসায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। নওগাঁ জেলার রাণীনগর ও বগুড়া জেলার আদমদীঘি এবং নন্দীগ্রাম উপজেলার সীমান্ত ঘেষা নাগর নদীর পাড়ে অবস্থিত এই মন্দিরটি দীর্ঘ সময় সংস্কার কাজ না হওয়ায় সনাতন ধর্মালম্ভীদের ধর্মীয় কর্মকান্ড করতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক হওয়ার কারণে যুগ্নীতলা মন্দির সবচেয়ে প্রাচীনতম হওয়া শর্তেও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা ও আত্মীয়-স্বজনদের মৃত দেহ দাহ করতে এসে চুলি ও পানি সংকট সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা, মৃত দেহ দাহ করার জন্য চুলি এবং পানির সরবারহ করা ও মন্দিরটি সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।
জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর কণে সীমান্ত ঘেষা একডালা ইউনিয়নের ঘাটাগন গ্রামের যুগ্নীতলা মহাশ্বশ্মান মন্দিরটি নাগর নদীর পাড়ে অবস্থিত। ঘটাগন ১৭ শতক জায়গার উপর মন্দির শ্মশান ঘাট অবস্থান হলেও ৯০ দশকের শেষ দিকে হঠাৎ করে জমির কাগজপত্র নিয়ে কিছু বিরোধ তৈরি হলে ধর্মীয় কর্মকান্ড স্বাভাবিক রাখতে একই গ্রামের অনিল চৌধুরী, শষ্ঠা, বরেন, গোপাল বেশকিছু জমি মন্দিরের নামে দানপত্র দেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি সহযোগীতা না পাওয়ায় দিনদিন মন্দিরটি তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। বছরের প্রতিটি পূজা-পর্বন অনুষ্ঠানে ব্যাপক লোকের সমাগম হলেও সার্বিক ব্যবস্থাপনা ভুঙ্গুর হওয়ার কারণে পূর্ণার্থীরা এসে নানা ভোগান্তির কবলে পড়ে। মহাদেবের পূজা ও বিশেষ করে এই মন্দিরে সুন্যাস ঠাকুরের পূজা প্রতি বছরের পৌষ মাসের ৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজায় ওই এলাকার সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষদের ঢল নামে, আনন্দ সবার সাথে ভাগাভাগি করার লক্ষ্যে নানান উৎসবে তারা মেতে উঠে। কিন্তু পিছু ছাড়ে না তাদের ভোগান্তি। ঘাটাগন গ্রামের মোড় থেকে মন্দির পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার মেঠো পথ আর কাঁদা-পানির কারণে অনেক দর্শনার্থীরাই ধীরে ধীরে এখানে আসা থেকে দিনদিন মুখ ফিরে নিচ্ছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং বসার মত ভাল পরিবেশ না থাকায় এই মন্দিরের সুনাম দেশব্যাপী থাকলেও দিনদিন তা পিছিয়ে পড়ছে। এলাকাবাসীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উৎসব গুলো পরিচালিত হলেও আর্থিক সংকটের কারণে তা থমকে যেতে বসেছে। জরুরি ভিত্তিতে সনাতন ধর্মালম্ভীদের মৃত দেহ দাহ করার জন্য চুলি, পানি সরবারহের ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, মন্দির সংরক্ষণ সহ স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের একান্ত প্রয়োজন। মন্দির কমিটির দাবি, এলাকার উন্নয়নে সরকারের অনেক প্রকল্পই আসে, মন্দিরটি উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলমের কাছে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ঘটাগন গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিন্দ্রনাথ রায় জানান, প্রাচীনতম এই যুগ্নীতলা মন্দির ও মহাশ্মশন দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত। আমাদের ধর্মীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতে নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও মন্দির সংরক্ষণের কাজ দীর্ঘ দিন ধরে করতে না পারাই আগত পূর্ণার্থীদের অনেক অসুবিধা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মন্দিরটির উন্নয়নে ব্যবস্থা করলে আমরা সনাতন ধর্মের লোক জনরা অনেক খুশি হবো।
উপজেলার একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রেজাউল ইসলাম জানান, ওই মন্দির ও শ্মশান ঘাটটি অনেক পুরাতন। দীর্ঘদিন ধরে এখানে হিন্দু ধর্মের লোকজনদের ধর্মীয় কর্মকান্ড সহ প্রতি বছরেই সুন্যাস পূজার বড় আয়োজন হয়। অনেক দর্শনার্থী এখানে আসলেও অবকাঠামোর উন্নয়নে অনেক ঘার্তি আছে। এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে আগামীতে আমার পরিষদ থেকে একটি বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করবো। প্রয়োজনে আমি নিজে এমপি মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করবো।