নিজেদের সংস্কৃতি ভাষা শিল্প সাহিত্যের মর্যাদা দিন: শেখ হাসিনা
নিজেদের সংস্কৃতি ভাষা শিল্প সাহিত্যের মর্যাদা দিতে না পারলে এর উৎকর্ষ সাধন করতে না পারলে জাতি হিসেবে উন্নত হওয়া যায় না জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার বিকালে অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন তিনি।
শুরু হলো বাঙালির প্রাণের উৎসব, অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
শেখ হাসিনা বলেন, বইমেলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্র প্রসারিত করে।
প্রযুক্তি নির্ভর সাহিত্য চর্চার সুযোগ তৈরি করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
এ সময় শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের সাহিত্য-সংস্কৃতি, মাতৃভাষার প্রতি টান থাকে না।
প্রধান অতিথির ভাষণে বইমেলাকে 'প্রাণের মেলা' হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মেলা সাহিত্যের চর্চা বাড়ায়।
রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন থেকে ছয় দফা আর ছয় দফা থেকে স্বাধীনতা, বাঙালির সকল অর্জনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজেদের শিল্প-সাহিত্য আর সংস্কৃতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যেন বিশ্বজুড়ে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি অভিযোগ করেন, ৭৫'র পর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের মাতৃভাষার প্রতি টান ছিলো না।
এর আগে সাহিত্যে অবদানের জন্য ১২ জন কবি-লেখকের হাতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন তিনি।
এরপর মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিটসহ মোট ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৫ হাজার ৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দু’টো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের ৬টি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশে থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা।
গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
এবারো গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন থাকছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ, ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ ৮টি দেশের ১৫ জন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশ নেবেন।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, র্যা ব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে ২৫০টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।