রাণীনগরের এজাদুল ভাঙ্গা মেরুদন্ড নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে জীবন সংগ্রাম
শাহরুখ হোসেন আহাদ, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: অসহায় হতদরিদ্র ঘরের সন্তান এজাদুল ইসলাম (৩৮)। অর্থাভাবে লেখা পড়া করতে পারেননি তিনি। পড়া-লেখা ছেরে দিয়ে অন্যের বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু নিয়তির খেলা! কাজ করার সময় দেয়াল চাপা পরে মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় চিকিৎসা অভাবে গত ৭ বছর ধরে পঙ্গুত্ব বরণ করে কখনো মাদুর তৈরি, কখনো সিমিত আকারে হাঁস-মূরগী পালন আবার কখনো সিদ্ধ ডিমের ব্যবসা করে চলে তার জীবন সংগ্রাম। পঙ্গুত্বের কারনে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ব্যাংক, এনজিও বা সমিতি থেকে কোন ঋন পান না তিনি। ফলে ছোট-খাটো ব্যবসা করেই এক মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলছে তার। অসহায় পঙ্গু এজাদুল রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের করজগ্রাম উত্তরপাড়া গ্রামের জনাব আলীর ছেলে।
এজাদুল ইসলাম জানান, অভাব-অনাটনের সংসারে জন্ম নেয়ায় কোন মতে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখা করতেই অর্থাভাবে পড়া শুনা বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র ১২ বছর বয়সে সংসারের ঘানি টানার দ্বায়িত্ব পরে তার ঘারে। অন্যের বাড়ীতে কাজ করে যে ক’টাকা পায় তা দিয়ে ভালই চলতো সংসার। কিন্তু নিয়তির কি খেলা গত ৭ বছর আগে একই গ্রামে মাটির বাড়ীর কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতা বসত: দেয়াল চাপা পরে মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়। চিকিৎসা ব্যয় সামাল দিতে না পেরে অবশেষে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। সংসার জীবনে মা, স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে এজাদুলের। মেয়ে স্থানীয় স্কুলে ৮ম শ্রেনীতে লেখা-পড়া করে। পঙ্গু হবার পর থেকেই একটি আধা ভাঙ্গা হুইল চেয়ারে বসে শীতের সময় নিকটস্থ বাজারে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। সারাদিন বেচা-কিনা করে যে এক-দেড়শ টাকা আয় হয় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে মেয়েটার লেখা-পড়া চালাতে হয়। অনেক সময় বিছানায় বসে মাদুর তৈরি করি। স্ত্রীর পালন করা হাঁস-মুরগীর ডিম থেকেও কিছু টাকা আয় হয়। এই দিয়ে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে চলে সংসার। এজাদুলের দর্জির কাজ জানা থাকলেও সেলাই মেশিন কিনতে না পারার কারণে সেটাও থমকে গেছে। কোন সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে যে সেলাই মেশিন কিনবে অথবা ব্যবসার প্রসার ঘটাবে তাও কপালে জোটে না। কারণ, পঙ্গু হওয়ার অপরাধে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও বা সমিতি থেকে তাকে ঋন দেয় না। একাধিক সংস্থায় আবেদন করেও কিস্তি দিতে পারবে না এমন আশংকায় তাকে ঋন দেয়া হয়নি। তার আকুতি, যদি সাধ্য মতো পুঁজি তাকে দেয়া হয় তাহলে ব্যবসা করে মেয়ের লেখা-পড়া সহ সংসারটা ভাল চলতো।
উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম বাবলু মন্ডল জানান, ইতিমধ্যেই তাকে একটি পঙ্গু ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। যদিও তা একটি সংসার চলার ক্ষেত্রে অতি সামান্য। আমি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তার জীবন-জীবিকা চলার জন্য সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করবো।