কুলাউড়া-শাহবাজপুর ১৬ বছরের পরিত্যক্ত রেললাইনের সংস্কার কাজ শুরু
এ.কে.অলক মৌলভীবাজার: দীর্ঘ ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর পরিত্যক্ত কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। গত ৫ ফেব্র“য়ারী থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভারতের ‘কলকাতা কালিন্দী রেল নির্মাণ’ কোম্পানী রেললাইনের কাজ শুরু করেছে। গত ১৬ জানুয়ারি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ রেলওয়ের নিকট থেকে কাজের সাইট বুঝে নেয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পরিত্যক্ত এ রেললাইনের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় এবং পু্র্ণরায় ট্রেন চালুর খবরে কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার উপজেলার লাখ লাখ মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। তবে রেলওয়ের ভুমি স্থাপনা নির্মাণকারীদের হতাশা বিরাজ করছে।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যৌথভাবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর পরিত্যক্ত রেললাইনের সংস্কার কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু প্রায় ৩ বছর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে উক্ত রেল লাইনের সংস্কার কাজ। অবশেষে বাস্তবে রেললাইনের সংস্কার কাজ শুরু হল।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সাথে কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনটি যুক্ত হয়। ১৯৫৮-৬০ সালে এই রেলপথটি পুনর্বাসন করা হয়। অব্যবস্থাপনা ও সংস্কারের অভাবে এ রেললাইনে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। বিধস্ত রেললাইনটি ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠলে ২০০২ সালের ৭ জুলাই পুর্বঘোষণা ছাড়াই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ফলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা এবং সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পড়েন যোগাযোগ সংকটে। বেদখল ও নষ্ট হয়ে পড়ে ৬টি রেলস্টেশনসহ কোটি কোটি টাকার সরকারী ভুমি। পূর্ণরায় এই রেল লাইন চালু হলে জনসাধারনের যাতায়াত সুবিধা ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি গুরুত্বহীন হয়ে পরা কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন প্রাণ ফিরে পাবে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতে এই লাইন ভারতীয় সীমান্তে দ্বৈত গেজে রূপান্তরিত করলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে। রেল পথটি পূণরায় চালু হবার খবর শুনে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের জেনারেল ম্যানেজার আবদুল হাই জানান, ফেব্র“য়ারীর শুরুতেই কুলাউড়া শাহবাজপুর রেললাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারী ভারতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কলকাতার কালিন্দি রেল নির্মাণ কোম্পানিকে সাইট হস্তান্তর করা হয়। ব্রডগেজ এই রেললাইনটি চালু হলে কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত পাঁচটি ট্রেন চলাচল করবে। লোকাল ট্রেন ছাড়াও আন্তঃনগর ট্রেনের সাথে ভারতীয় ট্রেনও চলবে। বন্ধ থাকাকালীন রেলওয়ের জমি জবর দখল করে গড়ে উঠে অবৈধ স্থাপনা। এগুলো উচ্ছেদের লক্ষে রেলওয়ের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে নোটিশ দেয়া হলে অনেকেই নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরানো শুরু করে।
সরেজমিনে এ সেকশনের দক্ষিণভাগ ও শাহবাজপুর রেলস্টেশন এলাকা ঘুরে ভারতীয় কোম্পানীর লোকজনকে সংস্কার কাজ করতে দেখা গেছে। শ্রমিকরা জানায় প্রথমে তাদেরকে স্টেশনের ইয়ার্ড প্রস্তুতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য তারা প্ল্যাটফর্মের পুরাতন ইট তুলে মাটি ড্রেসিং করছে। অন্তত ১-২ মাস এ কাজ চলবে। এরপর শুরু হবে মূল লাইনের ড্রেসিং কাজ। ব্রিজ, স্টেশন ভবন নির্মাণসহ পর্যায়ক্রমে রেলস্ট্রেক স্থাপনের কাজ করা হবে। লাইনের সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় অবৈধ দখলদাররা তড়িগড়ি করে পাকা আধা পাকা অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলছে।
রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান জাবির জানান, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ভারতীয় ঋণে ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হবে। এরমধ্যে ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইনলাইন ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইন। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেকে) সভায় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকার প্রকল্প (সংশোধিত) অনুমোদিত হয়। মোট ব্যয়ের ১২২ কোটি টাকা দেশিয় অর্থায়ন এবং বাকি ৫৫৬ কোটি টাকা ভারত সরকার বাংলাদেশকে ঋণ হিসেবে প্রদান করবে।