রূপা হত্যা মামলায় চার জনের ফাঁসি
টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর রূপা খাতুন নামে এ মেয়ে হত্যা মামলায় চার জনের ফাঁসি ও একজনের সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবুল মনসুর মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে টাঙ্গাইলের মানবাধিকার আইনজীবী পরিষদ মানববন্ধন করেছে।
মাত্র ১৪ কর্মদিবসে অভিযোগ গঠন থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত এ মামলার পেছনে সময় ব্যয় হয়েছে।
টাঙ্গাইলে আইন অঙ্গনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত সময়ের মধ্যে হলো।
গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী রূপা খাতুনকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে দেয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর এ মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। এরপর গত ৩ জানুয়ারি মামলার বাদী মধুপুরের অরণখোলা ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামের সাক্ষীর মধ্যদিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শুরু হয়। পরে আট কর্মদিবসে বিচারিক হাকিম, চিকিৎসক, তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে চার কর্মদিবসে আসামিদের পরীক্ষা এবং উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
টাঙ্গাইলের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান বলেন, টাঙ্গাইলে তো বটেই, সারা দেশেও সম্ভবত এত দ্রুত সময়ে কোনো মামলা নিষ্পত্তি হয়নি— এটি আইন অঙ্গনে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আজাদ বলেন, এভাবে মামলার নিষ্পত্তি হলে মানুষের আদালতের প্রতি আস্থা বাড়বে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সহায়ক হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম নাছিমুল আক্তার বলেন, মামলায় সাক্ষীরা ঘটনা আদালতে প্রমাণ করতে পেরেছেন।
নিহত রূপার ভাই হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হওয়ায় তারা সন্তুষ্ট। শুধু তাদের পরিবার নয় পুরো দেশবাসী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করে।
গত ২৫ আগস্ট রাতেই পুলিশ রূপার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে রূপার মরদেহ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন। রূপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), সুপার ভাইজার সফর আলী (৫৫) এবং চালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) গ্রেপ্তার করে। এরা পাঁচ জনই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।