ভাঙাচোরা সড়ক, ধুলায় সয়লাভ জনজীবন শ্রীপুরে ড্রাম ট্রাকের তান্ডবে অতিষ্ট এলাকাবাসী
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটীর তালতলী, টেংরা, সাইটালিয়া, ছাতির বাজারসহ কয়েকটি গ্রামে অধিক ওজনের মাটি বোঝাই ড্রাম ট্রাকের তান্ডবে অতিষ্ট এলাকাবাসী।
চারপাশ ধুলায় অন্ধকার করে চলছে যানবাহন। এতোটাই ধুলিময় পরিবেশ যে সামনে ১০ফুট দূরত্বেও ভালো দেখা যায় না। তার ওপর সড়কের বেশিরভাগ জুড়ে ভাঙ্গন। এই চিত্র গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের। কম ওজন সহনীয় সড়কে ড্রাম ট্রাক ও অন্যান্য ভারি যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলকে দোষছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো।
গত সোম ও মঙ্গলবার সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি সড়কে গিয়ে দেখা যায় ধুলা ও ভাঙা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে ভারি ও ছোট-বড় যানবাহনগুলো। শ্রীপুর-সাতখামাইর হয়ে পাশের উপাজেলায় যুক্ত হওয়া সড়কটি পরিদর্শন করা হয়। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৪কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী। কোন কোন স্থানে গভীর খাদ। তা ছাড়া সড়কটির বেশিরভাগ অংশ থেকে পীচ উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে ধুলা উড়ে। মাওনা পল্লীবিদ্যুৎ মোড় হতে ত্রিমোহনী সেতু পর্যন্ত সড়কটি বর্তমানে সংস্কারাধীন। দুই পাশে প্রসস্তকরণ কাজ চলায় ব্যস্তত আঞ্চলিক সড়কটির বেশিরভাগ অংশ ধুলার চাঁদরে ঢাকা থাকে। জৈনাবাজার থেকে গাজীপুর সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত ৫কিলোমিটার সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে আছে। এর বেশিরভাগ অংশের পীচ উঠে গেছে। প্রচুর যান চলাচল কারায় সড়কটির ভাঙা অংশ সবসময় ধুলিময় বাতাসের চাঁদরে ঢেকে থাকে। রাস্তা লাগুয়া গাছের সবুজ পাতার রং ধূসর সাদায় পরিণত হয়েছে। এই সড়কের দুই পাশের বাসিন্দাদের কাছে সকালের মৃদুমন্দ বাতাস বলে কিছু নেই। মাওনা –কলিয়াকৈর সড়কের ১২কিলোমিটার জুড়েই দুই পাশে গভীর খাদ। মূল সড়কের দুই পাশে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যানগুলো খাদে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েই চলছে। তা ছাড়া সড়কটির ১০টি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙ্গন রয়েছে। এই সড়কের একাধিক গাড়ি চালকরা জানিয়েছেন, সরু সড়কের ভাঙা অংশে প্রতিদিন প্রায় ৬টি গাড়ি কিছুক্ষনের জন্য আটকে থাকে। ফলে সড়কটিতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মাঝে মাঝে ভারি যানবাহন বিকল হলে তা তাৎক্ষণিক সাড়ানো না গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়।
উপজেলার বিভিন্ন সড়কের আশপাশের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বালু ও মাটিবাহী গাড়ি প্রচুর চলাচল করায় সড়কগুলোতে সবসময় ধুলা উড়তে থাকে। তা ছাড়া সরু সড়কে ড্রাম ট্রাকের মতো প্রসস্ত যান চলাচল করায় সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটে। ড্রাম্প ট্রাক ছাড়াও শিল্পকারখানার মালামালবাহী ভারি গাড়িগুলো সড়কের ভাঙ্গনের জন্য দায়ী।সড়কে পানি জমে থাকার কারনেও এর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং সড়ক ও জনথ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোট ৩২০কিলোমিটার সড়ক এলজিইডি’র আওতায়। এলজিইডি’র আওতায় থাকা সড়কগুলোর মধ্যে লোহাগাছিয়া-ইজ্জতপুর, টেংরা-বলদিঘাট, শ্রীপুর-কাওরাইদ, মাওনা-গাজীপুর, বরামা-বরমীসহ কয়েকটি সড়কের ৫০কিলোমিটার সংস্কার করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথের আওতায় আছে ৮২ কিলোমিটার। সওজ এর আওতায় থাকা সড়কগুলো হলো মাওনা-বরমী-গফরগাঁও ১৯ কিলোমিটার, মাওনা-শ্রীপুর-গোসিংগা-কাপাসিয়া ১৮কিলোমিটার, শিশুপল্লী-এমসিবাজার ৪কিলোমিটার, বৈরাগিরচালা-মাস্টারবাড়ি ৫কিলোমিটার, রাজেন্দ্রপুর-কাপাসিয়া-টোক সড়কের শ্রীপুর অংশের ১০কিলোমিটার, মির্জাপুর মাস্টারবাড়ি- নূহাসপল্লী সড়কের শ্রীপুর অংশের ১২কিলোমিটার ও আরও কয়েকটি সড়কের ছোট ছোট অংশ। এর মধ্যে ৩৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান বলে জানা গেছে।
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন জানান, উপজেলার বেশিরভাগ রাস্তার ওজন সহনীয় ক্ষমতা ১০-১৫টন। কিন্তু এই সড়কগুলোতে অবাধে চলছে ৩০-৩৫টনের ভারি ড্রাম্প ট্রাক। বালু ও মাটিবাহী ড্রাম্প ট্রাকগুলোর বেপরোয়া চলাচল করার কারনে রাস্তা বেশিদিন টিকে না। তা ছাড়া শিল্পকারখানার ভারি যান্ত্রপাতি ও মালবাহী গাড়িগুলো মহাসড়ক হয়ে আঞ্চলিক সড়কে ঢুকে পরে। কিন্তু আঞ্চলিক সড়কের বেশিভাগই ওই ভার বহনে সক্ষম নয়।