চিকিৎসকদের ভুলে পারভীন খাতুনের মৃত্যু! মায়ের অভিযোগ
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরের নয়নপুর বাজারের তানিয়া মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় পারভীন খাতুনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে পেটে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত অস্ত্রোপাচার করেন। রাতেই সে মারা যায় বলে তার মায়ের অভিযোগ।
নিহত পারভীন খাতুন (২১) ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার চারবাড়িয়া গ্রামের রুবেল মিয়ার স্ত্রী। সে স্বামীসহ শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের শামসুল হকের বাড়ীতে ভাড়া থাকতো।
নিহত পারভীনের স্বজনেরা জানান, দেড় বছর আগে পরিবহন শ্রমিক রুবেল মিয়ার সাথে পারভীনের বিয়ে হয়। গত একসপ্তাহ আগে পারভীনের পেটে ব্যাথা শুরু হয়। এসময় তাঁর মা ছাহেরা খাতুন প্রথমে তাকে মাওনা চৌরাস্তার এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। পল্লী চিকিৎসক তাকে দেখে মাওনা চৌরাস্তার শাপলা হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিডনীর সমস্যা হয়েছে বলে জানায়। পরে তাঁর স্বজনরা তাকে পুনরায় বৃহস্পতিবার মাওনা চৌরাস্তার নোভা হাসপাতালে নিয়ে যান। নোভা হাসপাতালের চিকিৎসকরা পারভীন গর্ভবতী বলে ব্যবস্থাপত্র দেয়।
এদিকে, কয়েকদিন ধরে পেটে ব্যাথা না কমায় তাঁর স্বামী রুবেল মিয়া তাকে শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নয়নপুর বাজারে তানিয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তানিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুস ছালাম তাঁর এপেনডিসাইটিস হয়েছে বলে দ্রুত অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে নিজেই অস্ত্রোপাচার শুরু করেন। অস্ত্রোপাচারের পরপরই পারভীনের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে তাঁর শ্বাস কষ্টের সমস্যা দেখা দিলে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি প্রাইভেটকার ডেকে এনে রোগীকে তুলে দিয়ে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার পূর্বেই পারভীন মারা গেছে।
নিহতের ভাবী নুপুর আক্তার জানান, তানিয়া হাসপাতালে নেয়ার পরপরই চিকিৎসকরা অপারেশনের তাড়াহুড়ো শুরু করেন। পরে পারভীনকে আমি অপারেশন থিয়েটারের ভেতর পর্যন্ত দিয়ে আসি। সে সময় চিকিৎসক আব্দুস ছালাম ও একজন সেবিকা ছাড়া আর কেউ ছিল না। তারাই অস্ত্রোপাচার করেন।
নিহত পারভীন আক্তারের মা ছাহেরা খাতুন জানান, মৃত্যুর পর আমরা তাঁর লাশ বাড়ীতে দাফন করে এসেছি। অনেকেই বলেছে, অভিযোগ করলে ঝামেলা হবে, লাশ কবর থেকে তুলে কাটা ছেড়া করা হবে। তাছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে আমাদের বাড়াবাড়ি করতে অনুরোধ করেছেন।
এব্যাপারে অস্ত্রোপাচারের চিকিৎসক আব্দুস ছালাম বলেন, পারভীনকে মূলত এপেনডিসাইটিস অস্ত্রোপাচার করা হয়। পরে সে সুস্থ ছিল এবং হাটাহাটিও করেছে ১২টা পর্যন্ত,তার পরিবারের সবাই উপস্থিত ছিল। পরে রাত দুইটার দিকে তাঁর শ্বাস কষ্ট শুরু হয়,উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তবে নিজেও কক্ষে থাকলেও তাঁর সাথে আর কারা ছিলেন তাঁর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এব্যাপারে গাজীপুর জেলার সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল হক জানান, অস্ত্রোপাচার করার সময় একজন অভিজ্ঞ সার্জন, একজন এনেসথেসিয়া ও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার বিধান রয়েছে। পরিবারের পক্ষ একজন চিকিৎসক অস্ত্রোপাচার করেছে বলে যে অভিযোগ করেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোকন মিয়া জানান, চিকিৎসক আব্দুস ছালাম নিজেই একাধারে এনেসথেসিয়া ও সার্জন থাকায় তিনি অস্ত্রোপাচারটি করেছেন। তবে, রাতেই রোগীর অন্যান্য সমস্যা দেয়া দেওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই জানা নেই তাঁর।