জ্ঞান আর সৃজনশীলতার চর্চা যেনো শুধু মেলার মাসে সীমাবদ্ধ না থেকে সারাবছর অব্যাহত থাকে
বছরের শুরুতে রাজধানীতে দুটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। জানুয়ারি মাসের এক তারিখে শুরু হয় আন্তজার্তিক বাণিজ্য মেলা ও ফেব্রুয়ারির এক তারিখে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। পণ্য বৈচিত্র আর ব্যাপ্তিতে বাণিজ্যমেলা সবচেয়ে বড় মেলা হলেও জ্ঞান-ঐতিহ্য আর বিষয়ভিত্তিকতায় বইমেলাই দেশের সবচেয়ে বড় মেলা। একটি ছোট পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। এবছর মাসব্যাপী (২৮ দিন) অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মোট ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে পাঁচকোটি ১০ লাখ টাকা বেশি। অন্যদিকে পুরো জানুয়ারি মাস (৩১ দিন) ও ফেব্রুয়ারির অতিরিক্ত ৪দিন মিলিয়ে ৩৫ দিনের বাণিজ্যমেলায় নগদ বিক্রি হয়েছে নগদ ৮৭ কোটি টাকার পণ্য। প্রকাশনা শিল্পের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন লেখক, প্রকাশক আর ক্রেতা বেড়েছে। দেশের নানা নেতিবাচক বিষয়ের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক এই বইমেলার চিত্র সত্যই আশাব্যঞ্জক। সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হিসেবে বিবেচিত ‘বই পড়া’, বই পড়া থেকে আনন্দ, বুদ্ধি ও সক্ষমতা অর্জিত হয়। মেলার পরিসংখ্যানে সেই বই পড়ার উপাদান বই এর বিপুল সংখ্যক ক্রেতা-পাঠক দেশের জ্ঞানভিত্তিক অগ্রসরতার প্রমাণ বলে আমাদের ধারণা। এবছরও মেলায় নতুন বই প্রকাশে শীর্ষে ছিল কবিতার বই। কবিতার বই এসেছে এক হাজার ৩৯৫টি। এরপরই রয়েছে ছোট গল্পের বই ৬৫৫টি, উপন্যাস প্রকাশিত হয় ৬১২টি। এ ছাড়া মেলায় ২৪৮টি প্রবন্ধ, ৭৯টি বিজ্ঞান, ১০৫টি ছড়ার বই, ১০৮টি ইতিহাস, ১১৮টি শিশুতোষ এবং ৩৯৩টি অন্যান্য বিষয়ের নতুন বই এসেছিল। শুধু একাডেমি প্রাঙ্গণ নয়, একাডেমির সামনে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের একাংশে আয়োজিত মেলা আগত ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থীদের স্বস্তি এনে দিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বইমেলার সময় কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটলেও এবার নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যকর উদ্যোগে মেলা ছিল শতভাগ নিরাপদ। বইকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিশাল পরিসরে এবারের বইমেলা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ হওয়ার পর আমরা বাংলা একাডেমির পাশাপিাশি বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বইকে কেন্দ্র করে সাহিত্য, জ্ঞান আর সৃজনশীলতার চর্চা যেনো শুধু মেলার মাসে সীমাবদ্ধ না থেকে সারাবছর অব্যাহত থাকে, এই আমাদের প্রত্যাশা।