ভোটযুদ্ধের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা "অা.লীগের অধিকাংশ মন্ত্রী এমপি'র জনপ্রিয়তায় ধ্বস
বার্তা সম্পাদক,চ্যানেল ফোর নিউজ, ঢাকা।
আওয়ামী লীগে অর্ধেক মন্ত্রী ও শতাধিক এমপির কপাল পুড়তে পারে আগামী নির্বাচনে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানামুখী জরিপ চালিয়ে আসছেন আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে। সংসদীয় দলের সভায় বারবার বলেছেন, জরিপে যারা উঠে আসবে তারাই মনোনয়ন পাবে।
চলমান সর্বশেষ জরিপে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট মন্ত্রী থেকে অনেক আলোচিত এমপিসহ শতাধিক প্রার্থীর অবস্থা নির্বাচনী এলাকায় নাজুক। কারো বয়স, কারো জনবিচ্ছিন্নতা কারো বা সিণ্ডিকেট নিয়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে।
দেড়'শ আসনে প্রার্থী বদল করে ভোটযুদ্ধের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
অনেক এমপিরা নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় গণবিরোধী কর্মকাণ্ডই করছেন না, দলবিচ্ছিন্ন হয়ে অথনৈতিক বিত্তই গড়ে তোলেননি, টেণ্ডার, কমিশন, চাঁদা, নিয়োগ বাণিজ্য মিলিয়ে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছেন।
বাইরে প্রতাপশালী হলেও ভেতরে জনপ্রিয়তা হারিয়ে সমালোচনার তীরে ক্ষত-বিক্ষত অনেক প্রার্থিই। কেউ কেউ নিজে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মাধ্যমে নিজ নির্বাচনী এলাকায় নানা অপকর্মের মাধ্যমে অাখের গোছানোসহ দলকে করেছেন চরম বিতর্কিত ও জনঅাস্থাহীন । কোন কোন এলাকায় এমপি বা এমপি পরিবারের দৌরাত্মে জনগন বিকল্প প্রার্থির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হয়েছেন।তারা ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে জবাব দেবার সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
জনমত জরিপে ছিটকে পড়া মন্ত্রী-এমপিদের জায়গায় জনপ্রিয় গণমুখী ও সৎ অনেক প্রার্থী উঠে আসছেন। পরিবর্তনের হাওয়ায় প্রায় দেড়শ আসনে প্রার্থী বদল করে ভোটযুদ্ধের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, গণমাধ্যমে যেসব চূড়ান্ত তালিকা প্রচার হচ্ছে তা সত্য থেকে দূরে রয়েছে। সকল জরিপ বিবেচনা করে খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা একাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছেন।
কাটাছেঁড়া চলছে, নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার আগে পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রার্থী জরিপ অব্যাহত থাকবে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আল্লাহর পর কেবল শেখ হাসিনাই জানেন কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন? যাদের নাম গণমাধ্যমে চূড়ান্ত বলে এসেছে তাদের অনেকেই মনোনয়ন পাচ্ছেন না।
নানামুখী জরিপের যে চিত্র উঠে এসেছে উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালী মন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, ধর্মমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি (এবার টেকনাফের কোটায় হলেও) নির্বাচনী এলাকায় চরম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন সৎ মানুষ হিসেবে সব মহলে সম্মানিত। তিনি বলে আসছেন, আগামীতে নির্বাচন করবেন না এবং ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন। তার ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রার্থী হতে মাঠে নামলে দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
জরিপে মুহিতের বিকল্প মুহিত থাকলেও একটি প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসা কঠিন বিষয়। সাবেক সচিব ও নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের নামও সিলেট সদর আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় উচ্চারিত হচ্ছে।
নুরুল ইসলাম নাহিদ সম্পর্কে জাতীয়ভাবে ইতিবাচক ইমেজ থাকলেও এলাকায় দল ও মানুষের তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। বিশেষ করে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে তিনি ব্যর্থতার যে পরিচয় দিয়েছেন তা জাতির সামনে তাকে বিতর্কিত করেছে, ক্ষুন্ন করেছে তার ইমেজ।
একই অবস্থা কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীরও। এলাকায় দলের নেতাকর্মীসহ অনেকেই তার উপর ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট বলে জানা গেছে।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের নির্বাচনী এলাকায়ও অবস্থান ভালো নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক মরহুম এমপি-মন্ত্রী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের এলাকাতেও অা.লীগের জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে।
খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দলের মুখপাত্র হিসেবে সারাদেশ নিয়ে দলের জন্য কঠিন পরিশ্রম করছেন। কিন্তু নোয়াখালী থেকে ফেনী পর্যন্ত যে অর্থনৈতিক সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রতাপশালী হয়ে উঠেছে এতে সেইসব এমপিদেরই বিতর্কিত করেনি সেতুমন্ত্রীকেও বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, এ্যাড: কামরুল ইসলামসহ এক ডজনেরও বেশি মন্ত্রীর জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামার চিত্র উঠে এসেছে সর্বশেষ জরিপে।
অা.লীগের মন্ত্রীসভার সব চেয়ে শীর্ষ বিতর্কিত মন্ত্রী ভুমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। পাবনা-৪ অাসনে তিনি, তার পুত্র, স্ত্রী, মেয়ে জামাই মিলে ত্রাসের সিন্ডিকেট গড়ে তুলে জনজীবনকে দূর্বিসহই শুধু করেননি, অা.লীগকে বারবার জাতিয় সংবাদ শিরোনাম করেছেন।
রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগ, স্কুল কলেজে নিয়োগ বানিজ্য, জামাত শিবিরকে টাকার বিনিময়ে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান, মন্ত্রীপুত্রের সাংবাদিক পিটানো, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, এলাকার সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চাঁদাবাজিসহ জনজীবনকে দূর্বিসহ করে তোলা,প্রধানমন্ত্রীর পোস্টার লাগাতে বাধাপ্রদান,অপহরণ, একই দলের প্রতিপক্ষ নন্দিত রাজনৈতিক উত্তরবঙ্গের মানুষের সততার প্রতিক সাবেক এমপি পাঞ্জাব বিশ্বাস ও তার অনুসারিদের এলাকায় গণসংযোগে বাধা প্রদান, হামলা মামলা করে ভিটেমাটি ছাড়া করাসহ অগণিত অভিযোগ রয়েছে ভূমিমন্ত্রী, তার ছেলে ও মন্ত্রী পরিবারের বিরুদ্ধে।
অা.লীগ পরিচালিত চলমান জরিপ কাজে নিয়োজিত এবং কেন্দ্রিয় কমিটির শীর্ষ পদে অাসীন দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কেন্দ্রিয় নেতা এ প্রতিবেদককে নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, অা.লীগের শতাধিক এমপি জনপ্রিয়তা শুন্যের কোঠায়।
বয়স, পুত্র কন্যাদের অবাধ দূর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদা অাদায়,সিন্ডিকেট গড়ে তোলা, কথিত রাজনৈতিক নেতাদের স্থানীয় কমিটিগুলোতে পদ ও পদবি দিয়ে পূর্ণবাসিত করে জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অনেক অাগেই।
তিনি গাজীপুরের একটি অাসনের উদাহরণ টেনে বলেন, জাতিয়ভাবে, কেন্দ্রে বা শেখ হাসিনার কাছে এসব নেতা জনপ্রিয় হলেও নির্বাচনী এলাকায় এরা চরম বিতর্কিত ও জনসমর্থহীন।
তিনি জানান এ ধরনের এমপি অা.লীগে শতাধিক।তাদেরকে মনোনয়ন না দিতে জরিপ টিম শেখ হাসিনাকে তথ্য প্রমানসহ সুপারিশ করেছে।তবে তিনি বলেন, মনোনয়নের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন শেখ হাসিনা নিজেই।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দূরে থাক ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের বাইরে থেকে এবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছেন।
এতে করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে শতাধিক মন্ত্রী-এমপির কপাল পুড়বে আর জনপ্রিয় গণমুখী সৎ প্রার্থীদের কপাল খুলবে।অাগামি নির্বাচনে তরুণ প্রার্থিদের জয়জয়াকারের পাশাপাশি অগণিত বরেণ্য জনপ্রিয় অরাজনৈতিক কবি সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও নানা শ্রেনী পেশার মানুষকে মনোনয়ন দিয়ে জাতিকে চমক দেখাতে পারে অা.লীগ।