আমাদের যারা নেতৃস্থানীয় যারা দল পরিচালনা করছেন তাদের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে
আমাদের যারা নেতৃস্থানীয় যারা দল পরিচালনা করছেন তাদের বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি হামলায় পণ্ড হয়ে যায়।
পরে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামী শনিবার ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ অভিযোগ করেন।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার অভিযোগ করে
তিনি বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে ঘটনাগুলো ঘটল। এতটুকু সৌজন্যবোধ তারা দেখায়নি যে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সেখানে ছিলেন! তাদের সামনেই, আমাদের কর্মসূচি তারা শেষ করতে দেয়নি, সেই ভাবেই তারা আক্রমণ করেছে। আজকে এটা হামলা। আমরা পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ধিক্কার জানাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রদলের এক নেতাকে আটক করতে গিয়ে বিএনপির কর্মসূচি শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে পণ্ড করে দেয় পুলিশ। বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়ার কর্মসূচি দুপুর ১২টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১১টা ৫০ মিনিটে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানে তা পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি এস এম মিজানুর রহমান রাজসহ তিন নেতাকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কোনো স্বাধীন দেশে এইভাবে গ্রেপ্তার হতে দেখিনি। আমরা এটাকে তুলনা করতে পারি হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর সঙ্গে। অথবা অন্য ডিকটেটরেরা যেভাবে কাজ করেছে গণতান্ত্রিক কর্মীদের ওপর আক্রমণ অত্যাচার করেছে তাদের সঙ্গে।’
ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রীকে কারাগারে নেয়ার পর আমরা যতগুলো কর্মসূচি দিয়েছি, প্রত্যেকটি কর্মসূচি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। এতেই বোঝা যায়, সরকারের গাত্রদাহ হচ্ছে, যে কারণে আজকে তারা উসকানি দিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যায়ভাবে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, গতকালকের মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সমস্ত বক্তব্য রেখেছেন এ বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় গণতন্ত্র শুধু তাদের জন্য। এই দেশটা তাদের। এখানে অন্য কারও কোনো অবস্থান নেই। আমরা দুঃখের সঙ্গে বলছি অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে বলছি, এই সরকার যে ব্যবস্থা চালু করল, এই অনৈতিক অবৈধ সরকার, এ ব্যবস্থা থেকে আবারও গণতন্ত্রে ফিরে আসা অত্যন্ত দুরূহ কাজ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীকে আটকের পর তা ভণ্ডুল হয়ে গেছে। বেলা ১১টায় পূর্বঘোষিত এ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কর্মসূচিতে অংশ নেয়া কয়েকজন নেতা কর্মীকে আটক করতে গেলে সেখানে হট্টগোল বেধে যায়। এ ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘটনার নিন্দা জানান।
বিএনপির এ অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সকাল ১০টা থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জল কামানের গাড়িও রাখা হয়।
কর্মসূচির কারণে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। অন্যপাশ দিয়ে উভয়মুখী চলের ব্যবস্থা করে পুলিশ।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
সেই থেকে তিনি ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
ওই রায়ের পর বিএনপি পাঁচ দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান, প্রতীকী অনশন, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি।
এদিকে, বিএনপি নেত্রীর মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে জেলা বিএনপি। দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন এতে। নাটোরের বড়াইগ্রামের রাজাপুরে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে উপজেলা বিএনপি। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।
একই দাবিতে জেলার সিংড়াতেও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে উপজেলা বিএনপি। এছাড়া, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেরপুর, খাগড়াছড়ি, রাজবাড়ীসহ দেশের অন্যান্য জায়গাতেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান বিএনপি নেতাকর্মীরা।