নড়াইলের এক অনন্য সূচশিল্পী ইলোরা পারভীন
এস এম আলমগীর কবির নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইলের মেয়ে সূচশিল্পী ইলোরা পারভীনের (৪৪) নিপূন হাতে সূচ-সূতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যসহ বিশ্ববরেণ্যদের দৃষ্টি নন্দন ছবি তৈরী করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের নজর কেড়েছেন। তাঁর সেলাই করা ছবিতে সত্যিকারের জীবন্ত মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
ইলোরার পৈত্রিক নিবাস নড়াইল পৌর এলাকার মাছিমদিয়া গ্রামে। এ গ্রামেই বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের জন্ম। সুলতানের বাড়ির পাশেই ইলোরার জন্মভিটা। ইলোরার পিতা মরহুম আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সমবয়সী ও বাল্যবন্ধু ছিলেন। শৈশবকাল থেকে ইলোরার ছবি আঁকার প্রতি শখ ছিল। যে কারণে এসএম সুলতানের অনুপ্রেরণায় ছবি আকার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সেই আগ্রহ থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ বিশ্ববরেণ্যদের ছবি আঁকার স্বপ্ন দেখেন। অবশেষে সে আশা বাস্তবে রুপদান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। একটি বইয়ের কভারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখে ১৯৯৮ সালে সূচ-সূতা দিয়ে বুননের মাধ্যমেই ইলোরা এ পথে হাঁটতে শুরু করেন। সূচ-সূতা দিয়ে সেলাই করে তৈরী করা ছবি যেন জীবন্ত মানুষের অবিকল রুপ। এ এক অসম্ভব বাস্তবতা। যে কোন লোক এ দৃষ্টিনন্দন ছবি দেখে সহজেই আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাবে। তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে অদ্যাবধী মোট ৩৫ টি শিল্পকর্ম শেষ করতে সক্ষম হয়েছেন । তাঁর সূচশিল্পে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার ও বিশ্ববরেণ্যদের ছবি। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের চিত্রকর্মের সংখ্যা ১৭ টি। এর মধ্যে দাঁড়ানো অবস্থায় একক বঙ্গবন্ধু, তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর বাবা-মা, শেখ রাসেল, শেখ হাসিনা ও জয়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখ,সুলতানা কামাল, ফজিলাতুন্নেসা, শেখ হাসিনার পাঁচ ভাইবোনের গ্রুপ ছবি। বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে চিত্রকর্মটি ফ্রেমসহ দৈর্ঘ্য ৩০ ইঞ্চি আর প্রস্থ ২১ ইঞ্চি।
সম্প্রতি ইলোরার সূই সূতায় তৈরী করা শেখ রাসেলের একটি ছবি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে প্রদর্শণ করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সূই সূতায় ইলোলার নিপূণ হাতে সেলাই করা ছবি দেখে আনন্দে অবিভূত হয়ে যান। এ ধরনের দূর্লভ ছবি সারা বিশ্বে চীন ও ভিয়েতনামে কিছু দেখা যায় বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সূচ-সূতার এই কারিগর সূচশিল্পী ইলোরা পারভীন নড়াইলের গৌরব। এ সকল ছবি সেলাই করতে পেরে ইলোরা গর্বিত। স্বামী, সংসার ও দু’মেয়েসহ পরিবারের সবকাজ সামলিয়ে সূচ-সূতায় আঁকা বুননশিল্পী হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছেন নিঃঅহংকার ও প্রচার বিমূখ ইলোরা পারভীন। ইলোরা সাত ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম। ১৯৯৮ সালে ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে ২য় শ্রেণিতে মাষ্টার্স পাস করার পর জন্মভূমি নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফেরেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি মো. ফয়জুল্লাহ বিশ্বাসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবনে পা রাখেন। তার দুই মেয়ে হুমাইয়রা ফয়েজ ৮ম শ্রেণিতে ও নাফিসা ফয়েজ ২য় শ্রেণিতে ভিকারুন্নিসা কলেজের আজিমপুর শাখায় অধ্যয়নরত। এ পর্যন্ত নিজ শিল্পকর্মগুলো কোথাও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেননি তিনি। তবে ইলোরার ছবিগুলো নিয়ে শিগগিরই ঢাকা আর্ট গ্যালারীতে একটি প্রদর্শণীর আয়োজনের কার্যক্রম চলছে।
ইলোরা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে আমার শিল্পের হাতেখড়ি। বড় ভাই জেলা যুবলীগের আহবায়ক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। পারিবারিকভাবে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যে কারণে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে চিত্রকর্মের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলন, রায়েরবাজারের বধ্যভূমি, জাতীয় সম্পদ, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রাগান্ধী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান, নববধূ, পাখি, নিজের মা নূরজাহান প্রমূখ ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি মাত্র। বাল্যকাল থেকেই পাঞ্জাবী, শাড়ি, বিছানার চাদরসহ নানা রকম পোষাকে সূচ-সুতার দৃষ্টি নন্দন শৈল্পিক কাজ করে অভ্যস্ত। এ শিল্প কর্মে ছবির গলা, হাত, পরনের কাপড়ের ভাঁজ ফুটিয়ে তুলতে বেশি সময় অতিবাহিত হয়। কোনো কোনো ছবির চোখ আকতেই ১৫-২০ দিন সময় লেগে যায়।’