স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ
প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেখানে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের কাছে এ চিঠি হস্তান্তর করেন জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিপিডি) সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোলেরাস।
গত ১৫ মার্চ সিপিডি জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এডিসি ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনসংক্রান্ত ঘোষণা করে। সে অনুসারে এ চিঠি হস্তান্তর করা হয়। তবে চূড়ান্তভাবে এ যোগ্যতা অর্জন করতে আরও ছয় বছর উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এরপর ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।
এডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক—এ তিনটির যেকোনো দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি এক্সপার্ট গ্রুপের চেয়ার হোসে অ্যান্তোনিও ওকাম্পো, জাতিসংঘের এডিসি, এলএলডিসি (ভূবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ) ও সিডস (উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহ) সংক্রান্ত কার্যালয়ের উচ্চতম প্রতিনিধি আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফেকিতামইলোয়া কাতোয়া উটইকামানু। জাতিসংঘে নিযুক্ত বেলজিয়ামের স্থায়ী প্রতিনিধি মার্ক পিস্টিন, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদূন হাদি সিনিরলিওলু, ইউএনডিপির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিয়াং ঝু এবং ইউএনডিপির মানবিক উন্নয়ন রিপোর্ট অফিসের পরিচালক সেলিম জাহান।
এছাড়াও বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কর্মকর্তাগণ এবং জাতিসংঘ সদরদপ্তরে কর্মরত বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ভিডিওচিত্রে উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে—সেসব উন্নয়ন পরিক্রমা।
একে একে তুলে ধরা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গসমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক।
তুলে ধরা হয় পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত-নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের সবার জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাচ্ছি যে বাংলাদেশ এ প্রথম এডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের সব নির্ণায়ক পূর্ণ করেছে।’
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে এ বছরে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২.৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪.৮ ভাগ।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
উন্নয়নকে টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে সদস্যদেশগুলোকে স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল, উন্নত দেশ—এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে সিডিপি।
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিতে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনীতি ভঙ্গুরতা সূচক, এই তিনটির যেকোন দুটি অর্জন করতে হয়।
বাংলাদেশ তিনটি সূচকের পর্যাপ্ত মানদন্ড অর্জন করে বিশাল এ স্বীকৃতি অর্জন করেছে।