জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ছাড়ল যুক্তরাষ্ট্র
নোংরা রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ এনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল ত্যাগের কথা জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি।
মাইক পম্পেও কাউন্সিলকে মানবাধিকারের দুর্বল রক্ষক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আর নিকি হ্যালির দাবি, কপট ও স্বার্থপরায়ণ সংস্থাটি মানবাধিকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ‘চরম ইসরায়েলবিরোধী’ বলে গত বছরই সংস্থাটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেছিলেন হ্যালি।
একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, সংস্থাটির সদস্যপদের বিষয়টি মূল্যায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০০৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল গঠিত হয়। জেনেভাভিত্তিক এই কাউন্সিলের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সমুন্নত ও সুরক্ষা।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তা সমুন্নত রাখার তৎপরতা ব্যাহত হতে পারে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তার মুখপাত্রের মাধ্যমে বিবৃতিতে বলেছেন, এই কাউন্সিলে যুক্তরাষ্ট্রের থাকার বিষয়টিকে অধিকতর শ্রেয় মনে করেন তিনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘হতাশাব্যঞ্জক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে খবরটি বিস্ময়কর নয় বলেও মন্তব্য তার।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল প্রশ্নে মীমাংসা না হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ছাড়লো যুক্তরাষ্ট্র। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এই কাউন্সিলের অবস্থান পছন্দের নয় যুক্তরাষ্ট্রের। তারা চাইছিলো, এই কমিশন ইসরায়েলবৈরী।
জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেন, ‘ভণ্ড ও নিজ স্বার্থে পরিচালিত’ এই কাউন্সিল আসলে ‘মানবাধিকারের নামে রসিকতা করে’।
গত ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জেনেভাভিত্তিক এই কাউন্সিলটির সদস্য দেশগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তাদের অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী অনৈতিক দখলদারিত্ব ও নিপীড়নকে এর আলোচ্যসূচির স্থায়ী বিষয়বস্তু হিসেবে রেখেছে ওই কাউন্সিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা, কাউন্সিল তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে তাদের স্থায়ী আলোচ্যসূচি থেকে বাদ দেবে। বুশ প্রশাসনের সময় প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী ৩ বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। তবে ওবামা শাসনামলে ২০০৯ সালে ওয়াশিংটন কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত হয়।
ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল নামের রাষ্ট্র। ১৯৭৬ সালের ৩০ মার্চ ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ইহুদি বসতি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় ছয় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। পরের বছর থেকেই ৩০ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পরবর্তী ছয় সপ্তাহকে ভূমি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। গ্রেট রিটার্ন মার্চ নামে অনুষ্ঠিত এবারের সেই বিক্ষোভ কর্মসূচির শেষদিনের আগে ১৪ মে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ জোরালো হয়ে উঠলে একদিনেই ৬৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার প্যানেল গত মাসের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওই হত্যাযজ্ঞের তদন্তের পক্ষে অবস্থান নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাকটিভিস্ট ও কূটনীতিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ১৭ জুন গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয়েছিল, ‘ইসরায়েলবিদ্বেষী’ ভূমিকাকে কারণ দেখিয়ে কমিশন থেকে সরে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।