বিরল রোগে আক্রান্ত মেহেদী হাসান স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়
রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি 4TV
নওগাঁর রাণীনগরের গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর মন্ডলপাড়া গ্রামে আবুল কালাম আজাদের ছেলে মেহেদী হাসান (১০) জন্মের মাত্র ৭ দিনের মাথাই পুরো শরীরে ভাইরাসের সংক্রমনে আক্রান্ত হয়ে হাত-পা সাদা-সাদা হয়ে চামড়া ফাটতে শুরু করে। বিরল এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দিন রাত সব সময় প্রচন্ড ব্যাথা আর শরীর ফেটে রক্ত ঝড়ায় অধিকাংশ সময় যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে কেঁদে কেঁদে দূর্বিষ জীবন-যাপন করছে এমন সংবাদ ২০১৬ইং সালের ডিসেম্বর মাসে দৈনিক করতোয়ায় প্রকাশিত হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম ও তৎকালীন সময়ের নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও সার্বিক সহযোগীতার জন্য মেহেদীর পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তাদের পরামর্শে সমাজ সেবা অফিসে আবেদন করা হলে ওই বছরই তাদের সহযোগীতায় প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হলে ৪ দিন পর চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে প্রায় ৯ মাস চিকিৎসা শেষে শারীরিক কিছুটা উন্নতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে গত ৪ মাস আগে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে আসে। তবে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার আগে মেহেদীর স্বজনকে বলা হয়েছিল, আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তার চিকিৎসা পুন:রায় শুরু করা হবে। সে ক্ষেত্রে যে পরিমাণ খরচ হবে তার অর্ধেক ব্যয় আপনাদেরকে বহন করতে হবে। মেহেদীর বাবা হতদরিদ্র ভ্যান চালক আবুল কালাম আজাদ ও মা গৃহিনী জাহানারা বেগম ছেলের উপযুক্ত চিকিৎসা করার অর্থ জোগার করতে না পারাই প্রায় ৪ মাস ধরে চিকিৎসা বিহীন অবস্থায় বাড়ি রয়েছে মেহেদী। ফলে তার শারীরিক অবস্থা দিনদিন আগের মতই অবনতি হচ্ছে। ছেলেকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবান, দানবীরসহ সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
জানা গেছে, মেহেদী হাসান ২৮ মে ২০০৭ সালে রাণীনগর উপজেলার ৩নং গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ঘরে জন্ম নেয়। জন্মের পর থেকেই মেহেদীর শরীর ধবধবে সাদা। তখন চিকিৎসকের কাছে গেলে ‘রক্ত শূণ্যতা’ রোগে আক্রান্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। মা জাহানারা বেগম বলেন, দিন দিন মেহেদীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে তার শরীর নানান স্থানে ফেটে যাওয়া। সাধ্যের মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছেলের চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু রোগটি অজানাই থেকে যায়। একা খেতে পারে না। কিছু ধরতেও পারে না। কারে সাথে খেলাধুলা করতে এমনকি ঠিক মতো শুয়ে থাকতে পারে না। তার সেবা যতœ নিজেকে করতে হয়। তবে শীতের সময় বেশি সমস্যা হয়। গায়ে জামা কাপড় পরে থাকলে খুবই অসুবিধা হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ ফেটে রক্ত বের হয়ে জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে কিছুটা দূর্গন্ধ ছড়ায়। যার কারণে কেউ তার সেবা যতœ করতে চাই না। মেহেদী হাসান জানায়, সে অন্য ছেলে-মেয়ের মতো খেলতে, পড়তে, বাঁচতে চায়। সে ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। তবে সেখানেও রয়েছে কিছুটা বিড়ম্বনা, তাকে দেখে সহপাঠীরা এরিয়ে চলে। স্কুল কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার মেহেদীকে একটি স্কুল ড্রেস পড়িয়ে দেয়। প্রধান শিক্ষিকা সাহানা ফেরদৌস জানান, সে নিয়মিত স্কুলে আসে কিন্তু অসুস্থ্যতা আর বেশি গরমের কারণে সে বেশিক্ষন থাকতে চায় না। উপবৃত্তিসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা তাকে দেওয়া হবে।
মেহেদীর বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, তার বাড়ীর জায়গা ছাড়া কিছুই নেই। ভ্যান চালিয়ে সংসারের খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। অর্থ যোগারের অভাবে প্রায় ৪ ধরে আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য আর ঢাকা নিতে পারিনি। তাই আমি সকল বিত্তবানদের সহযোগীতা কামনা করছি।
উপজেলার ৩নং গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খান হাসান জানান, মেহেদীর বাবা আবুল কালাম আজাদ হতদরিদ্র মানুষ। আমার পরিষদের পক্ষ থেকে শুরুতেই কিছু সহযোগীতা করেছি। পরে মিডিয়ার বদৌলতে শেষ পর্যন্ত মেহেদী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৯ মাস চিকিৎসা নিয়েছে। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে পুন:রায় চিকিৎসার জন্য অর্ধেক খরচ আবুল কালামের বহন করতে হবে। এতো টাকা যোগার করার সামর্থ তার নেই। তাই ছেলেটি আগের মতই দিনদিন অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে।