গোপালগঞ্জে বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদল নেতার চাকরি : সংবাদ প্রকাশে দৌড়-ঝাপ শুরু
নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ 4TV:
জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের “গোপালগঞ্জে বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদল নেতার চাকরি : প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড়” শিরোনামে দেশের বিভিন্ন অনলাইন ও কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তার দৌড়-ঝাপ শুরু হয়। বর্তমানে তিনি নিজেকে বাচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তার এ নিয়োগের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ছাত্রদলের সহ-প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলকে বশেমুবিপ্রবি-র আইন বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এদিকে জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামাত পন্থী একজন ছাত্র নেতার নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস এবং শহর জুড়ে এখনো বইছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সচেতন সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বিগত ২০১০ সালের ৬ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমির স্বাক্ষরিত ছাত্রদল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির তালিকায় মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ওই ছাত্রদল নেতা বশেমুরবিপ্রবি-র পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান সহকারী অধ্যাপক ও ইবি-র ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সাবেক ছাত্রদল নেত্রী ফাতেমা খাতুনের সম্পর্কে দেবর হন।
কে এই মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ছাত্রদলের সহ-প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। বিগত ২০১০ সালের ৬ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমির স্বাক্ষরিত ছাত্রদল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির তালিকায় মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ওই ছাত্রদল নেতা বশেমুরবিপ্রবি-র পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান সহকারী অধ্যাপক ও ইবি-র ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সাবেক ছাত্রদল নেত্রী ফাতেমা খাতুনের সম্পর্কে দেবর হন।
এরআগে, বিগত ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট আইন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে নয় জন প্রভাষক পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে আবেদন চেয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্রভাষক পদে নিয়োগের ‘গ’ নং শর্তে উল্লেখ করা হয় শিক্ষা জীবনে প্রাপ্ত ডিগ্রীর কোন পর্যায়েই তৃতীয় বিভাগ বা ৩.০০ নীচে জিপিএ গ্রহনযোগ্য হবেনা। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের এসএসসি-তে প্রাপ্ত জিপিএ নম্বর ২.৬২ হওয়া সত্বেও চাকরির যোগ্যতার শর্ত ভঙ্গ করে নিয়োগের সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয় তার নাম। এছাড়া তিনি আবেদনপত্র পূরনের সময় প্রাপ্ত রেজাল্টের ঘরে এসএসসি দ্বিতীয় বিভাগ উল্লেখ করেন। যদিও তার এসএসসির রেজাল্ট প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। তখন বিভাগ পদ্ধতি বাতিল হয়ে জিপিএ পদ্ধতি চালু হয়। ওই সময় এ বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ স্থগিত করে দেয়। তখন বশেমুরবিপ্রবি-র পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা খাতুনের বিরুদ্ধে বড় অংকের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠে।
সোহেলের পারিবারিক পরিচিতি : মো: পারভেজ (সোহেলের শশুর) ডেপুটি রেজিস্টার, ইবি, কুষ্টিয়া- একাধিক বার জিয়া পরিষদ থেকে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি নির্বাচিত
মাহমুদ হাসান (বড় বোনের স্বামী) জামাত-বিএনপি প্যানেল থেকে সুপ্রিম কোর্ট বার এ্যসোসিয়েশন নির্বাচনে সাবেক নির্বাচিত সদস্য।
আব্দুল হাকিম মোল্লা (সোহেলের পিতা) বিএনপি আমল থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ ভাবে একসাথে একাধিক সরকারী সারের লাইসেন্স চালিয়ে ব্যবসা করে এখন অনেক অবৈধ অর্থের মালিক।
প্রিয়া (সোহেলের ছোট বোন) ইতোপূর্বে ২০১৮-২০১৯ সেশনে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সেক্রেটারী হালিম এর বিরোধীতায় শেষ পর্যন্ত কার এ নিয়োগ ব্যর্থ হয়।
মুস্তাফিজুর রহমান সোহেল নিজেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের অর্থের প্রধান যোগানদাতা। বর্তমান সময়ের ইবি ছাত্রদল ক্রিয়াশীল রাখার পিছনে প্রধান অর্থ মদদদাতা। যেখানে বাংলাদেশের অন্য কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ক্রিয়াশীল নেই। ঢাকা বারে আওয়ামী রাজনীতির সাথে কখনও সে জড়িত ছিল না, আইয়ুবুর রহমান বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ঢাকা বার এর সাধারণ সম্পাদক নন। ইতোপূর্বে বিদ্যমান থাকা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ এর বিলুপ্তি ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত বছর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আত্মপ্রকাশ করলেও এখনও এর কোন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি শুধু মাত্র ব্যরিস্টার ফজলে নূর তাপস এর সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুস্তাফিজুর রহমান সোহেল তার রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করার উদ্দেশ্যে অর্থ ও প্রতারণার মাধম্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে একর পর এক ভূয়া প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করে চলছেন।
এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য দবির উদ্দিন জোয়ার্দ্দার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাতকার নিলে সোহেলদের পরিবারের প্রতারণা প্রকাশ পাবে। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দানের মাধম্যে ওই পরিবারটি এ দেশের ৩০ লক্ষ শহীদকে অপমান করেছে এবং প্রকৃত কুষ্টিয়ার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়েরের দাবিও জানান তারা।
এ ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন টি রিসিভ করেননি বা কথা বলেননি।
এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নামিরউদ্দীনের ব্যবহৃত মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন টি রিসিভ করেননি বা কথা বলেননি।
এ ব্যাপারে বশেমুরবিপ্রবি-র প্রক্টর মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামাতের কোন স্থান হতে পারে না। যদি এমন কোন ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা আসলেই ন্যাক্কার জনক বলে আমি মনে করি।
গোপালগঞ্জের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মী ও উদীচীর জেলা শাখার সভাপতি নাজমূল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটলে তা হবে খুবই দুঃখ জনক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-র রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ভিসি-তার নিজস্ব ভাব আদর্শের লোকজনদের নিয়োগ দিয়ে পরোক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে দূর্বল করে দিচ্ছেন। তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।