আশুলিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয়ে প্রতারিত গ্রাহকরা , নিম্নমাণের গ্যাস সিলিন্ডারে সয়লাভ আশুলিয়ার বাজারগুলো
আব্দুস সাত্তার,আশুলিয়া-সাভার :
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাবসা।নিম্নমাণের গ্যাস আর সিলিন্ডারে সয়লাভ আশুলিয়ার বাজারগুলো।
ব্যাপক অনিয়মসহ গ্রাহক হয়রানী চরম আকার ধারন করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারী বিধি-বিধান, নিয়ম-কানুন কিছুই মানছেন না সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা। মুদী দোকানি, চা দোকানি থেকে শুরু করে প্রায় সকল দোকানিরা এখন ঝুকে পড়ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাবসায়। সিলিন্ডার বিস্ফোরনে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। আবার একটি অসাধু চক্র নিম্ননমানের গ্যাস ও সিলিন্ডার বাজারজাত করছেন, সেই সাথে গ্রাহক ঠকিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বি এম কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করে প্রতারনার শিকার আশুলিয়া বাজার সংলগ্ন একুশে বিজনেস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো: আলমাছ মোল্লা সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, গত ২৩ তারিখ বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ডিলার মো: আউয়াল মুন্সীর কাছ থেকে( বি, এম) এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের একটি গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার ক্রয় করি, যা আমাদের পরিবারের এক মাস যাবত রান্না করলে খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু পাঁচ দিন যেতেই সিলিন্ডার গ্যাসে আর চুলা জ্বলে না। তখন সিলিন্ডারটি নাড়াচাড়া করে বুঝতে পারি ওটার ভিতরে পানি ভর্তি। এসময় সিলিন্ডারটি ওজন দিয়ে দেখি ১৯ কেজি, অথচ গায়ে লেখা আছে ১২ কেজি, মানে বাকিটা পানি ভর্তি ছিলো। এ বিষয়টি সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক আউয়াল মুন্সীকে জানালে, তিনি বিষয়টি সুরাহা না করে আমাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতিসহ হুমকি দিয়ে বলেন এটা কোম্পানির দোষ আমি কি করবো, তুই বিষয়টি কাউকে জানাবি না, আর জানালে বা তোর কিছু করার থাকলে তুই করিস। সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ থেকে বিএম কোম্পানির সিলিন্ডার কিনে প্রতারনার শিকার খেজুর বাগান এলাকার নোমান হোসেন একই অভিযোগ করে বলেন, আমিও ওখান থেকে সিলিন্ডার কিনে ৩দিন জ্বালাতে পেরেছি, তারপর যখন বুঝলাম সিলিন্ডার ভর্তি পানি, তখন আউয়াল মুন্সীকে জানালে উনি এলাকার প্রভাব দেখিয়ে আমাকে চেপে যেতে বলেন। সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ ও বিএম গ্যাস সিলিন্ডারের আরো বেশ কয়েকটি অনিয়ম আর প্রতারনার বিষয়ে জানতে আউয়াল মুন্সীর প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, বিএম গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন কোম্পানির শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। এসময় আউয়াল মুন্সী সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের অনিয়মের অভিযোগ আমিও পেয়েছি, কিন্তু এটাতো কোম্পানির বিষয়, আমরা কোম্পানির নিকট হতে ইনটেক সিলিন্ডার ক্রয় করে সাধারন গ্রাহকদের মাঝে কেনাবেচা করি, সেখানে কোন প্রকার অনিয়ম বা গ্রাহক প্রতারিত হলে সেটা কোম্পানির দায়ভার। এসময় তিনি কোন কোম্পানির ডিলার বা সিলিন্ডার বিক্রয়ের অনুমিতিপত্র, লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কিছুই দেখাতে পারেন নি। বরং তিনি জানেনই না গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় বিক্রয় বা ব্যবসা করলে সরকারি কোন অনুমতি দরকার আছে কি না? বা কোন লাইসেন্সের প্রয়োজন আছে কি না?। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন এলপি গ্যাস কোম্পানি আমাদেরকে নানান সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যেমে সিলিন্ডার বিক্রির উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। আমার মতো আশুলিয়ায় শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের কোন প্রকার বৈধ লাইসেন্স নেই। এগুলোর সাথে মূলত বিভিন্ন সিলিন্ডার কোম্পানির ডিলার ও মার্কেটিং অফিসাররা জড়িত। এ বিষয়ে বিএম গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির কর্মকর্তা অলোক কুমার পন্ডিতের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সাদিয়া এন্টারপ্রাইজ ও আউয়াল মুন্সী বিএম কোম্পানির প্রতিনিধি না এবং তারা আমাদের বৈধ ডিলারের কাছ থেকে সিলিন্ডার সরবারহ করে না। একটি অসাধু চক্র বিভিন্ন কোম্পানির খালি সিলিন্ডারে নিম্নমানের গ্যাস সরবারহ করছে। যার কারনে গ্রাহকরা হয়রানী ও প্রতারনার শিকার হচ্ছে এবং আমাদের কোম্পানির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আমরা খুব শীঘ্রই এ চক্রটিকে চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নিব। অন্যদিকে সমগ্র আশুলিয়ার বাজারগুলোতে অবৈধভাবে যেসব ব্যাবসায়ী গ্যাস সিলিন্ডার ব্যাবসা করছেন, তা যদি অচিরেই সরকারী বিধি বিধানের আওতায় না আসে, তবে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞ মহলের।