নাসরিন লঞ্চ ট্রাজেডির ১৫ বছর: আজও কাঁদছে স্বজন হারা পরিবার!
মাছুম বিল্লাহ, ভোলা 4TV
আজ ৮ জুলাই এমভি নাসরিন ট্রাজেডির ১৫ বছর। ২০০৩ সালের এ দিনে ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ভোলার লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে ৪০২ জনের সলিল সমাধি হয়। দেশে নৌ-দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। নাসরিন লঞ্চ ডুবির ১৫ বছর হলেও নিহত পরিবারে কান্না আজো থামেনি। দুর্ঘটনায় অর্ধেকেরও বেশি লাশ পাওয়া যায়নি মেঘনার অতল গহŸর থেকে। এক পরিবারের ২৬ জন নিয়ে বরযাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠে ২৪ জনকেই হারায় লালমোহন ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের মহেষখালী গ্রামের রিনা বেগম। রিনার সাথে বেঁচে আসে তার ফুফাতো ভাই সোহেল। কিন্তু চিরদিনের মত হারিয়ে ফেলে রিনার ৭ বছরের মেয়ে হাফসা, বোন স্বপ্না, রুমা, তাদের স্বামী-সন্তান, মামা আ: কাদের, মামি সুফিয়া, খালা রাহিমা, খালোত ভাই মিলন, মিজানসহ পুরো পরিবারের স্বজনরা। সেদিন রিনা ঢাকা থেকে ভাগ্নে কলেজ শিক্ষক মতিনের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য লালমোহনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। পরিবারের কোন সদস্যেরই লাশ খুঁজে পায়নি রিনা। নাসরিন লঞ্চে সেদিন এশার নামাজের ইমামতি করেছিলেন লালমোহন চরভূতা ইউনিয়নের মাদ্রাসা সুপার মাও: মাকসুদুর রহমান। নিজে বেঁচে আসতে পারলেও সঙ্গে থাকা ভাগ্নে নোমানকে আর খুঁজে পাননি। নিজের স্বামীকে হারানোর কথা তুলে ধরেন শামসুননাহার। স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়ে বেঁচে ফিরে আসার কথা জানান লালমোহনের ব্যবসায়ী মো: শাহজাহান।
স্বজনহারাদের দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত ১৭ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি আজো। এ রায় দ্রæত কার্যকর দেখতে চায় নিহত/নিখোঁজ পরিবারের স্বজনরা। নিহত পরিবারের স্বজনদের নিয়ে গত বছরের ৬ জুলাই ভোলায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস-ট্রাস্ট (বøাস্ট) একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। বøাস্ট ২০০৪ সালে ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও পরিবারের পক্ষে যথাযথ ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করে। দুর্ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৬ সালের ২ ফেব্রæয়ারি নি¤œ আদালত ওই মামলার রায় ঘোষণা করে ক্ষতিগ্রস্থদের ১৭ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। রায়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা করে নিহতদের পরিবারকে, ১০ লক্ষ টাকা করে নিখোঁজদের পরিবারকে এবং ১ লক্ষ টাকা আহত ১জনকে প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে বিআইডবিøউটিএসহ বিবাদী লঞ্চ মালিকপক্ষ ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করে। চলতি বছরের ৫ জুন মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম এবং বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বøাস্ট কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় নি¤œ আদালতের রায় বহাল রাখেন। এর ফলে মামলার বাদীভুক্ত ১২১ জন নিহতদের স্বজনদের ১৭ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানে আর কোন বাধা থাকে না। কিন্তু রায়ের পর বিআইডবিøউটিএ ও লঞ্চ মালিকপক্ষ কিভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা শোধ করবে তা এখনো স্পস্ট হয়নি। মামলার রায় হতে ১৩ বছর লেগেছে, ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে আরো কত বছর লাগে তা নিয়ে উদ্বিঘœ নিহতদের স্বজনরা। তবে নিহত-নিখোঁজদের স্বজনরা দ্রæত উক্ত রায়ের বাস্তবায়ন চান।