ঢাকার স্কুল পড়ুয়াদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে ,পর্নোগ্রাফিতে কারা বেশি আসক্ত?
বাংলাদেশে কেন শ্রেণির মানুষ বেশি পর্নোগ্রাফি ব্যবহার করে তা নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। তবে, স্কুল ছাত্রদের নিয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ করেছে বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’৷এ জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার স্কুল পড়ুয়াদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘তাদের ওই জরিপটি অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে করা হয়েছে। আর তাতে দেখা গেছে, পর্নোগ্রাফি তারা ছবি, ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট আকারে ব্যবহার করে।’গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্কুলপড়ুয়া এসব শিক্ষার্থীর দেখা পর্নোগ্রাফির বড় অংশই দেশে তৈরি। এই শিক্ষার্থীরা প্রধানত মোবাইল ফোনে অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখে। এর বাইরে ট্যাব, ল্যাপটপেও তারা দেখে। আবার পেনড্রাইভ ব্যবহার করে বিনিময়ও করে।
বাংলাদেশে সাধারণভাবে পর্নোগ্রাফির ব্যবহার কেমন বা কারা এর ভোক্তা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট জরিপ নেই। জরিপের ফলোআপে দেখা যায়, ৩০-৩৫ বছর যাদের বয়স এবং তাদের মধ্যে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের শতভাগই একবার হলেও পর্নোগ্রাফি দেখেছেন। নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখেন ৯০ ভাগ। আর যুবনারীদের মধ্যে সংখ্যাটা শতকরা ৫০ ভাগ।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপে আরো কিছু তথ্য উঠে এসেছে। যেমন ওই গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে পর্নোগ্রাফির প্রবণতা বাড়ছে। টেক্সট, ছবি ও ভিডিও-র বাইরে অডিও পর্নোগ্রাফি একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পেশাদারদের মাধ্যে সেক্স টেক্সটের অডিও তৈরি করে তা অনলাইনে ছাড়া হচ্ছে, ইউটিউব-এ ‘আপ' করা হচ্ছে। এর বাজারও বাড়ছে।
ডয়েচে ভেলেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রাস্তার তরুণরা হাঁটছে। তখনও হেড ফোনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বুঁদ হয়ে আছে। আমরা হয়তো মনে করি, তিনি গান শুনছেন বা কথা বলছেন। আসলে আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এর বড় একটি অংশ মোবাইল ফোনে অডিও পর্নোগ্রাফি শোনে।।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শুধু তরুণরা নয়, সব বয়সের মানুষই পর্নোগ্রাফি দেখে। আর পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতার ব্যবহারকারী বা গ্রাহক বাড়িয়ে দিচ্ছে। পর্ণোগ্রাফির সরবরাহ বন্ধ না করলে এর ব্যবহার কমানো কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘পর্নোগ্রাফিতে যারা আসক্ত হয়ে পড়েন, তারা বিকৃত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এটা নিজেদের ক্ষতির দিক। কিন্তু এর প্রধান শিকার হন নারী ও শিশুরা। তাদের এ কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার প্রধান কারণ এই পর্নোগ্রাফি।’
তাঁর মতে, ‘শুধু আইনই এটা বন্ধের জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন কঠোর মনিটরিং। এর ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যম যেহেতু সরকারের নিয়ন্ত্রণে, তাই এটা সরকারকেই দেখতে হবে। আর পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধও পর্নোগ্রাফি বন্ধের জন্য জরুরি।’
সূত্র: ডয়েচে ভেল বাংলা