বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় হুমকির মুখে বরেন্দ্র অঞ্চলের আউশ-আমন চাষ
রাজশাহীতে জোনে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে ১.৭ লাখ মেট্রিকটন
চলতি বোরো মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ফ্ল্যাশ ফ্লাডে হাওড় অঞ্চলের বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় দেশের বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর ফলে ধান ও চালের দাম বেড়েছে । এ ঘাটতি পূরণের একমাত্র নিরাপদ ও নিশ্চিত এলাকা হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চল। সঠিকভাবে এ অঞ্চলে আউশ ও আমনের আবাদ করা সম্ভব হলে সেই ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হবে বলে জানান কৃষিবিদ ও গবেষকগণ । কিন্তু বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী , নাটোর ও চাপাইনবাবগঞ্জের কয়েক শত গভীর নলক’পে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় আউশ ও আমন চাষ হুমকির মুখে পড়েছে । বর্তমানে সেচ যন্ত্র সমূহের লাইন বিচ্ছিন্ন করায় শুধুমাত্র রাজশাহী জেলায় প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল উৎপাদন অর্থাৎ প্রায় ১.৭ লক্ষ মেট্রিকটন আউশ ধান উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হবে বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, রাজশাহী ও নাটোর জেলা নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রাজশাহী রিজিয়ন গঠিত। এ রিজিয়নের অধীনে সর্বমোট ৩ হাজার ২৬২টি সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮৬ হেক্টর জমিতে বোরো মৌসুমে সেচ দেয়া হয়েছে। আর আউশ চাষের লক্ষ্যমাত্রা আছে প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টর জমি। চলতি অর্থ বছরে ৩ হাজার ২৬২টি সেচ যন্ত্রের বিপরীতে এপ্রিল’১৭ পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে প্রায় ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৭২ টাকা নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবে প্রায় ১৬ লাখ টাকার আপত্তিকৃত পাওয়ার ফ্যাক্টর মাসুল অপরিশোধিত আছে যা মোট বিলের মাত্র ০.৯০%। এ আপত্তিকৃত বিলের ব্যাপারে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনার জন্য বিএমডিএ চেয়ারম্যান গত ১৬ মে আরইবি’র চেয়ারম্যানকে পত্র দিয়েছেন। কিন্তু সে আলোচনার বিষয়টি উপেক্ষা করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিভিন্ন উপজেলায় জোর করে গভীর নলক’পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অব্যাহত রেখেছেন।
এ ঘটনায় তানোর উপজেলার চন্দনকোঠার মিজান, মোহনপুর পরিজনপাড়ার সিদ্দিকুর রহমান ও গোদাগাড়ি মলিত্রীর মজিবর রহমানসহ অনেক কৃষক জানান, সেচ যন্ত্রের আওতায় বর্তমানে আমন ধানের বীজ বপন ও ধান রোপনের কাজ চলছে। এছাড়াও রয়েছে সবজি ফসলের আবাদ। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় ফসল নষ্ট হতে চলেছে। বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বীজ তলার প্রস্তুতি ও ধান রোপনের কাজ ।
এ বিষয়ে বিএমডিএ রাজশাহী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান খান জানান, বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদেরকে কোটি কোটি টাকা ভর্তূকি দিচ্ছেন। অথচ, আপত্তিকৃত কিছু বিদ্যুৎ বিলের কারণে পল্লী বিদ্যুত বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সেচ যন্ত্রের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে । প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান আরো জানান, বিএমডিএ কর্তৃক নির্মিত ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র নিকট হস্তান্তরিত ১১ কেভিএ বিদ্যুৎ লাইনের জন্য বিএমডিএ ১০ শতাংশ প্রদত্ত বিলের উপর বাট্টা পেয়ে থাকে। কিন্তু বিগত ২০০৭ সাল থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিএমডিএ কে বাট্টা না দেওয়ায় পল্লী বিদ্যুতের নিকট বিএমডিএ’র পাওনা প্রায় ২৫ কোটি টাকা। যা নিয়ে অডিট আপত্তিও হয়েছে। তাছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিভিন্ন সময় বিএমডিএ’র নিকট থেকে ট্রান্সফরমার, পোল, পোল ফিটিংস ইত্যাদি মালামাল ধারে গ্রহন করেছেন যা এখনও ফেরৎ দেওয়া হয়নি। অফেরৎ ওইসব মালামালের মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। অথচ, নাম মাত্র ও আপত্তিকৃত বিল অপরিশোধিত থাকার কারনে জোর করে পবিস বিএমডিএ’র বিভিন্ন উপজেলার সেচ যন্ত্রের বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক সঠিক সময়ে আউশ ও আমনের আবাদ করতে পারছেনা ।