বদলগাছীর শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত
জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ নিরেন দাস।
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বিভিন্ন দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
যে অফিসে টাকা ছাড়া কোন প্রকার কাজ হয়না এবং সাথে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তদন্তে কোন অভিযোগই যেন প্রমাণিত করা যায় না অভিযুক্ত বদলগাছী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ছানাউল হাবিবের বিরুদ্ধে যাহার খুঁটির জোর কোথায় এমনও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরা।
এমনকি এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয় নিয়ে উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের চাঁপা ক্ষোভ বিরাজও করছে এবং শিক্ষা কর্মকর্তার বদলীর অপেক্ষাতে দিনো গুনছেন বদলগাছী উপজেলার সকল শিক্ষকগণরা।
তার বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, (দুদক) চেয়ারম্যান ঢাকা সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করা হয়েছে বলে জানা যায়।
আরও জানা যায় ১৩ জুন ২০১৪ সালে বদলগাছী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন অভিযুক্ত মোঃ ছানাউল হাবিব।তিনি অফিসে যোগদানের পর থেকে নিজের ইচ্ছে মতো অনিয়ম কে নিয়ম বানিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তিনি নিয়মিত অফিসেও আসেন না। উক্ত অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারী কে হাত করে তার অনিয়মের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন দীর্ঘ চার বছর ধরে।
অভিযোগে আরও পাওয়া যায় তাহার কিছু দালাল শিক্ষক আছেন যারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত শিক্ষা অফিসে যাতায়াত করেন এবং বিভিন্ন তদবির করে থাকেন। নওগাঁ জেলার এই বদলগাছী উপজেলায় মোট ১৩৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে যাহা তিনি তাহার দালাল চক্রের মাধ্যমে পরিচালনা করে আসছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তার বিষয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে তিনি নাকি শিক্ষক বদলীর ব্যাপারে তাহাকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। যদি কোন শিক্ষক টাকা দিতে না চান তাহলে তার বদলী বন্ধ থাকে। আবার কোন স্কুলের শিক্ষকদের পোষ্ট ফাঁকা থাকলে সেখানে কোন শিক্ষক যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাকে যেতে দেয়া হয়না যে ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তাকে শিক্ষকরা প্রশ্ন করলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু শিক্ষা কর্মকর্তার নিয়ম অনুসারে বদলী হতে হলে যে কেউ বদলী চাইলেই তো যেতে পারবে না পারবেন শুধু তারা যাদের টাকার অঙ্ক টা বাড়িয়ে দিলেই নাকি বদলী নিশ্চিত।
অভিযোগ সূত্রেধরে আরও জানা যায় গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৩০ হাজার টাকা স্লিপের বরাদ্দ করা হয়েছে। যে টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের উৎকোচ হিসেবে গুনতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা করে এছাড়াও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে স্লিপের বরাদ্দকৃত ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ৪ হাজার টাকা ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ৪ হাজার টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকের ৫ হাজার টাকার মধ্যে এক হাজার টাকা উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেছেন তাকে টাকা না দিলে নাকি কোন স্বাক্ষরি করেন না বাধ্য হয়ে শিক্ষকদের টাকা দিতে হয়।
শিক্ষকরা এই অফিসারের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে শিক্ষকরা জানান যেমন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্লিপের টাকায় শিক্ষা কর্মকর্তা নিজে বগুড়া থেকে সাইড ড্রাম নিয়ে এসে যে সকল বিদ্যালয়ে প্রদান করেছেন তার প্রায় সবগুলোই নষ্ট হয়ে গেছে।
২০১৭ সালে উপজেলার ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে ৭/৮ লাখ টাকার নিয়োগ বার্ণিজ্য হয়। টাকার একটি অংশ দলীয় ব্যক্তি, প্রধান শিক্ষক ও এসএমসি’র সভাপতিদের দিয়েছেন। আর বাকী প্রায় ৩ লাখ টাকা নিজের ভাগে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক মুখ খোলার সাহস পায় না। যদি কোন শিক্ষক মুখ খোলে তো তার উপর নেমে আসে বিভিন্ন হয়রানি। যদি স্কুলে আসতে দেরী হয় তাহলে বেতন থেকে মাস শেষে টাকা কেটে রাখা হয়। দেখে শুনে কোন শিক্ষক এসব হয়ারনি স্বীকার হতে চান না। তাই বাধ্য হয়ে নীরবে সহ্য করতে হয় শিক্ষকদের।
প্রতিনিয়ত উপজেলার শিক্ষকরা ওই শিক্ষা অফিসারের কারণে হয়রানি স্বীকার হতে হচ্ছে। কিন্তু নিরুপায়। যেন কিছুই করার নাই। সবকিছুই শিক্ষকদের মুখ বন্ধ করে নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে। তার ঘুষের ধরনটাই যেন অন্য রকম। ঘুষের টাকা অফিসে লেনদেন হয়না। আবার তিনি নিজেও সরাসরি টাকা নেননা। এসব অনিয়মের সাথে কয়েকজন শিক্ষক সম্পৃক্ত আছে। তাদের দিয়ে তিনি এ ঘুষের কাজ দেদারচে চালিয়ে যাচ্ছেন। বিনিময়ে তাদের কিছু কমিশন দিয়ে থাকেন। ঘুষ নেয়া হয়। কিন্তু পরিবর্তন হয় ঘুষ নেয়ার ধরন।
এছাড়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ‘বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ চিহ্নিত চোর ফারুক হোসেনকে নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।চোর সার্বস্ত হওয়ায় তাকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ নিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকা সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। কিন্তু নিজের ক্ষমতা বলে পরদিন গত ৫ ডিসেম্বর চোর ফারুক হোসেনকে নিয়োগ দিয়েছেন।
আর এতো অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। তার অনিয়মের হাত এতোই শক্তিশালী যে উপর মহলও কিছু করতে পারছেনা বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
বালুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জিল্লুর রহমান বলেন, ফারুক হোসেন সালিসে চোর সার্বস্ত হয়। আর এ চোরকে নিয়োগ না দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে পেপার কার্টিং সহ অভিযোগ দেয়া হয়। তারপর কোন পদক্ষেপ না নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চোরকে নিয়োগ দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছানাউল হাবিব তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,বা