গ্রাম-গঞ্জ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাড়তি উর্পাজনের সম্বল ভেসাল জাল
মাছুম বিল্লাহ.
ভোলার লালমোহনের খালগুলোতে জোয়ারের পানি না আসা, নাব্যতা সংকট, মাছ কম পাওয়া, খাল সরু হয়ে যাওয়া সহ নানা সমস্যার কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে ভেসাল (বেগ) জালের প্রচলন। এতে একদিকে যেমন জেলেরা বাড়তি আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি বাজারে দেশীয় প্রজাতির মাছের সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
ভেসাল জাল তৈরিতে প্রয়োজন হয় দুই থেকে তিনটি বড় বাঁশ। এ জাল মশারির নেট দিয়ে তৈরি করা হয়। হাজার টাকা হলেই তৈরি করা যায় একটি ভেসাল জাল। জেলেরা এ জাল দিয়ে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা রোজগার করেন। জোয়ারের পর ভাটার পানি নামার সময় খাল ও বিলে স্থানীয় জেলেরা ভেসাল জাল পেতে মাছ ধরেন। বর্ষার মৌসুমে খাল-বিল ও নদী-নালায় পানি বেশি থাকে, তাই এই সময় ভেসাল জালের ব্যবহার বেশি হয়। বছরজুড়েই কম-বেশি এ জাল ব্যবহার করেন স্থানীয় জেলেরা।
লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের শাহাজল হাওলাদার নিজ ঘরের পিছনে ছোট খালটিতে ভেসাল জাল পেতে মাছ ধরতেন। তিনি পেশায় একজন কৃষক হলেও অবসর সময় কাটে তার এই মাছ ধরার কাজে। তিনি জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করেই মাছ ধরার সময় ঠিক করেন।
শাহাজল হাওলাদার জানান, বিগত বছরগুলোতে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত, আবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মাছ ধরে তা নিজ পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করে বাড়তি আয় করতেন। তার জালে ধরা পড়তো শৈল, টাকি, বোয়াল, শিং, কৈসহ নানা প্র্রজাতির মাছ। তবে দুই বছর ধরে খালে জোয়ারের পানি ঠিকমতো না আসায় মাছ কম পাওয়া যায়, তাই তিনি এখন আর ভেসাল জাল পেতে মাছ ধরেন না।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, মৎস্য আইননুযায়ী উন্মুক্ত জলাশয়ে, খাল-বিলে মাছ চলাচলে প্র্রতিবন্ধকতা, নদী বা খালে কোনো কিছু দিয়ে আড়া-আড়ি বাঁধ দেয়া, যে কোনো ধরণের ফাঁদ ব্যবহার ও স্থাপনা নির্মাণ এবং ভেসাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। খালে জোয়ারের পানি না আসা এবং অধিকাংশ খাল শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী জেলেরাই। মশারি কাপড় দিয়ে মাছ ধরায় জালে মাছের রেণু পোনা ধরা পড়ে যাতে করে মাছের বংশ বিস্তার বিলুপ্ত হচ্ছে।