বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সোনা হেরফের করা সম্ভব নয়।
দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করতেই এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হতে পারে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক।
অর্থপ্রতিমন্ত্রীও বলছেন, ভল্টের সোনার কোনো পরিবর্তন হয়নি এমনটা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, দেশের অর্থনীতির জন্য স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি জনমনের আস্থা ধরে রাখতে সঠিক ঘটনা সামনে আনতে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
বিভিন্ন সময় শুল্ক গোয়েন্দা ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হওয়া অবৈধ সোনা, রাষ্ট্রীয় কোষাগার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয় । গেল সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দার রাখা সোনার মান বদল করার অভিযোগ ওঠে।
সংস্থাটির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়, প্রায় তিন বছর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের একটি চাকতি ও আংটি সোনার বদলে মিশ্র ধাতুতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ৯৬৩ কেজি সোনার বাকিগুলোও বাংলাদেশ ব্যাংক নথিভুক্ত করেছে প্রকৃত মানের তুলনায় কমিয়ে। এতে সরকারের প্রায় ৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ভল্টের বিদ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এমন ঘটনা অনেকটা অসম্ভব বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই কঠোর যে, কেউ রাতের বেলাও সেখান থেকে একটি সুঁই সরাতে পারবে না। কেউ এমনটা করতে গেলে ঢাকার প্রত্যেকটি থানায় অ্যালার্ম বেজে উঠবে। সুতরাং এখান থেকে কিছু সরানো অসম্ভব।
এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসে ভল্ট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এমন বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে।
মাহফুজুর রহমান বলেন,‘ ৪০ কে ৮০ লেখার মতো একটা ভুল হয়তো হয়ে গেছে। কিন্তু সেই বিষয়টিকে পাবলিক করার মানে হলো সরকারকে বিব্রত করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে হেয় করা।’
দেশের আর্থিক খাতের অভিভাবক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয় । এরইমধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছে সরকারের বিভিন্ন মহল।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি গভর্নরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি। আমি জানতে চেয়েছিলাম, সবকিছু ঠিক আছে কিনা, তিনি জানিয়েছেন সবকিছু ঠিক আছে।’
২০১৬ সালে সুইফট কোড জালিয়াতির মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ হারানোর পর সোনা কেলেঙ্কারির অভিযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তির জন্য বড় আঘাত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘যে অভিযোগটা এসেছে তার তদন্ত হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের ফলে ব্যাংকটির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া আমার মনে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুটা প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতি রয়ে গেছে।’
ভল্টের সোনা বদলের অভিযোগ তদন্তে নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।