গাংনীতে প্যারামেডিকেল ডাঃ এর হাতে প্রাণ গেল প্রসুতির
এম এ লিংকন,মেহেরপুরঃ
বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতাল। ছোট ছোট কক্ষ কয়েকটি কক্ষ নিয়ে বেশ ভালই ব্যাবসা জমিয়েছেন রবিউল ইসলাম মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক তরিকুল ইসলাম। অভিজ্ঞ ডাঃ গণের সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকলেও তাদের দেখা মেলা ভার। হাসপাতালটিতে সার্বক্ষনিক কোন অভিজ্ঞ সেবিকা না থাকলেও কর্তৃপক্ষের দাবি এখানে সার্বক্ষনিক রোগীদের সেবাই অভিজ্ঞ সেবিকা থাকে।
হাসপাতালটিতে মেজর অপারেশন করার ব্যবস্থা থাকার দাবি করলেও বাস্তবে তার উল্টোটি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রোগী থাকলেও চিকিৎসকের অনুপস্থিতি। আছেন শুধু কয়েকজন তথাকতিত অভিজ্ঞ সেবিকা। হাসপাতালটিতে যে কক্ষ গুলো রয়েছে সেগুলো শুধু ছোটই নয় বরং স্যাতসেতে অবস্থা বিদ্যমান। এখানে রোগ প্রতিকারের চায়তে রোগীকে আরো রোগী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে অনেকে মনে করেন।
এ হাসপাতালটির অনীয়ম অব্যবস্থাপনা নিয়ে এর আগেও কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছিল। তারপরও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যাবস্থা নিয়েছেন কিনা হাসপাতালের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বলা মুশকিল। জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৭-০৭-২০১৮) উপজেলার ভবানিপুর থেকে একজন প্রসুতি আসেন হাসপাতালটিতে। যদিও অনেক নিয়ম নীতি সম্পন্ন করার পর প্রসুতির অপারেশন করার কথা। সে ধরণের কোন নিয়ম না মেনেই প্রসুতিকে হাসপাতালটির মালিক বা পরিচালক তরিকুল ইসলাম নিজেই অপারেশন শুরু করে দেন।
আর তাতে প্রসুতির অবস্থা মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটে এবং পরে সে মারা যায়। মৃত প্রসুতি হলো উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের ভবানিপুর গ্রামের ইমারত মিস্ত্রি বাবুল হোসেন এর স্ত্রী ও তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের রামদেবপুর গ্রামের আঃ মান্নানে মেয়ে শুকজান। প্রসুতি শুকজান মারা গেলেও তার সদ্য প্রসুত মেয়ে সন্তানটি বেঁচে আছে বলে জানা গেছে।
অবস্থা বেগতিক দেখে হাসপাতালের পরিচালক তরিকুল ইসলাম প্রথমে মোবাইলে গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আর এম ও ডাঃ এমকে রেজাকে জরুরীভাবে সেখানে আসার জন্য অনুরোধ করে। পরে ডাঃ বিডি দাসকে আসার জন্য মোবাইল ফোনে অনুরোধ করলে তিনিও আলমডাঙ্গা থেকে দ্রæত আসেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ এমকে রেজা জানান, আমি এ্যনেস্থেসিয়া কার্য সম্পাদন করে থাকি।
দেলোয়ার মেমোরিয়াল হাসপাতালের মালিক তরিকুল ইসলাম একজন প্যারামেডিক পাশ করা একজন সহকারি মেডিকেল অফিসার। মোবাইলে আমাকে জরুরী ভাবে সেখানে যেতে বললে গিয়ে দেখি অপারেশন থিয়েটারে একজন প্রসুতির অবস্থা আশংকা জনক। সেখানে আমার কিছু করার ছিলনা। এদিকে তরিকুল ইসলাম অপারেশনের কথা প্রথমে অস্বীকার করে বলেন আমি কোন অপারেশন করি নাই অপারেশন করেছেন ডাঃ বিডি দাস ও এমকে রেজা। ডাঃ বিডি দাস আলমডাঙ্গাতে থাকলে রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার পর তাকে ফোন করে ডাকা হয় এমন কথার প্রেক্ষিতে তরিকুল ইসলাম তার কথার সুর উল্টিয়ে বলেন আমি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছি ডাঃ বিডি দাস আসার আগে ডাঃ এমকে রেজা অপারেশন করেছে।
অবশ্য ডাঃ এমকে রেজা তার এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি পাগল নই যে তার কথায় আমাকে অপারেশন করতে হবে। এদিকে ডাঃ বিডি দাসের সাথে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আলমডাঙ্গাতে ছিলাম সে সময় জরুরী ভাবে আমাকে ফোন দেয় রবিউল মেমোরিয়াল হাসপাতালের মালিক তরিকুল ইসলাম। অপারেশন থিয়েটারে পৌছে দেখি অপারেশন সম্পন্ন হয়ে গেছে। ঐ মুহুর্তে আমার কিছু করার ছিলনা।
এদিকে হাসপাতাল মালিক তার অপরাধ আড়াল করতে প্রসুতির স্বামী বাবুল হোসেন সহ ্য বিভিন্ন মহলকে ম্যনেজ করেছে বলে জানা যায়। তাছাড়া গত শুক্রবার দুপুরে প্রসুতির মৃত্যু হলেও দাফন সম্পন্ন হয়েছে শনিবার রাত্রীতে। বিলম্বে দাফন সম্পন্ন হওয়া নিয়েও ভবানিপুর গ্রামে সাধারন মানুষের মাঝে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রসুতি মৃত্যুর বিষয়টির তদন্তে রয়েছেন গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ স্বাধীন।
তার সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। সচেতন মহল মনে করেন অর্থ লোভ মানুষকে তার নীতি থেকে দুরে সরিয়ে রাখছে যে কারণে একজন আরেকজনের কাছে প্রতারীত হচ্ছে। এটা সংশ্লিষ্ট মহলকে কড়া নজরদারিতে এনে এ ধরণের অনীয়ম বন্ধ করতে হবে এখনই। অন্যথায় এ ধরনের অনীয়ম ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে এবং অকালে অনেক প্রাণ ঝরে যাবে ।