নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল বিরোধী পক্ষ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘কোটা সংস্কার’ এবং ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল বিরোধী পক্ষ— এমনটাই মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সাময়িক ‘অস্থিতীশীল’ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে সরকার।
কিন্তু আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারবিরোধী নানামুখী আন্দোলন ও অপপ্রচার চলবে। সে কারণে দেশবাসী যেন গুজবে কান না দেয় এবং সরকারের সাড়ে নয় বছরের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রচারণার নির্দেশ দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। আসছে কোরবানির ঈদের পর এই প্রচারণা জোরদার করা হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে।
কিন্তু আন্দোলনকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ভিন্ন খাতে নিতে কিছু সুশীল ও একটি রাজনৈতিক দল অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মানবিক ও উদার পদক্ষেপের কারণে আমরা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সামাল দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘যাদের পায়ের নিচে মাটি নেই, ভোটের মাঠে গ্রহণযোগ্যতা নেই, তারা আবার এ ধরনের আন্দোলনের ওপর ভর করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে।
কিন্তু আমরা শক্ত হাতে মোকাবিলার পাশাপাশি ভোটের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছি।’ দলীয় সূত্র জানায়, আগস্টকে আওয়ামী লীগ শোকের মাস হিসেবেই পালন করে। সে কারণে শোকের কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচি রাখা হয় না। ২২ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের পরই সংসদ নির্বাচনের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ।
দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন তৃণমূলে। কর্মিসভা, বর্ধিত সভা, বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় যোগ দেবেন তারা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ১৪ দল বিভাগীয় মহাসমাবেশ করবে বলেও জানা গেছে। বিগত খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের ঐক্য এবং সরকারের উন্নয়নের কারণে যে সফলতা এসেছে, সেগুলো তুলে ধরা হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদের পর আমরা জেলা পর্যায়ে বর্ধিত সভা করব। যেসব জায়গায় ছোটখাটো বিরোধ রয়েছে, সেগুলো নিরসন করব। বিগত কয়েকটি সিটি নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ ও উন্নয়ন প্রচারে যে সফলতা এসেছে, সেগুলো তুলে ধরব। এ ছাড়া তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেকে যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলোর ফলোআপ করব।’
সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আনাই আওয়ামী লীগের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সে কারণে উন্নয়ন প্রচারের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সরকার টানা সাড়ে নয় বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তা অতীতের ২৮ বছরেও সম্ভব হয়নি।
জনগণকে এ উন্নয়ন সম্পর্কে জানাতে হবে। এ ছাড়া ২০২১ ও ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে, আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো কী হবে তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারলেই আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবে। এজন্য আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রকাশনা সেলের পক্ষ থেকে লিফলেট, উন্নয়নচিত্র দিয়ে হ্যান্ডবুক ও প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে।
আবার সরকারদলীয় এমপিরা নিজ উদ্যোগে সরকারের উন্নয়নগুলো ও তাদের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নগুলো প্রচার করছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের মানুষ উন্নয়নের সঙ্গেই থাকতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সাড়ে নয় বছরে যে উন্নয়ন করেছে, বিগত ২৮ বছরে অন্য সরকার তা করতে পারেনি। আমরা বিগত কয়েকটি সিটি নির্বাচনে উন্নয়ন ও দলীয় ঐক্যের কারণে বিজয় পেয়েছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ঐক্য ও উন্নয়ন প্রচারে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এজন্য বেশি প্রয়োজন দলীয় শৃঙ্খলা। যাকেই নৌকা দেওয়া হবে সব ভেদাভেদ ভুলে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’