মংলা সমুদ্র বন্দর ঘুষ ছাড়া অচল আমদানীকারকেরা এখন দিশেহারা!
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট
ঘুষ ছাড়া মংলা সমুদ্র বন্দরের জেটি থেকে বের হয় না আমদানীকৃত রিকন্ডিশন গাড়ীসহ কন্টেইনারের বিভিন্ন পণ্য। লাগামহীন ঘুষের পাগলা ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় আমদানীকারকেরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
তাদের অভিযোগ, বন্দর জেটির অভ্যন্তরের সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানের স্বেচ্চাচারীতায় অতিষ্ঠ তারা। টাকা না দিলে গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্যের ছাড় করণের বিল ভাউচার দেন না তিনি। এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘুষ দিয়ে পণ্য ছাড় করেন আমদানীকারকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আমদানীকারক জানান, মংলা বন্দর থেকে প্রতিদিন ৫০ টি কিংবা তার কম-বেশি গাড়ী বের হলে সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানকে গড়ে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ৫০ টি গাড়ীর বিল ভাউচার তার হাত দিয়েই করাতে হয়।
তাকে সন্তষ্ট বা খুশি না করলে আমদানীকারকদের পক্ষে গাড়ী ছাড়ের বিলপত্র নেয়া অসম্ভব বলেও জানান তারা। এছাড়া তারা আরো বলেন, জেটির ভিতরে বিদেশ থেকে আমদানীকারকদের কন্টেইনারে আসা বিভিন্ন পণ্য ছাড়াতেও ইবনে হাসানকে ঘুষ দিতে হয়। এটা রীতিমত হয়রানি বলেও বন্দর ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।
এর থেকে মুক্তি পেতে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও লাভ না হওয়ায় বন্দর ব্যবহারকারীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
গাড়ী আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান বারভিডা’র সভাপতি হাবিব্ল্লুাহ ডন বলেন, এসব অসাধু ব্যক্তিদের কারণে আবারো মোংলা বন্দর ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন বলে হুঁশিয়ারী দেন।
বারভিডা’র সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, গাড়ীসহ বিভিন্ন পণ্য ছাড় করতে যে ঘুষ দিতে হয় সেটা আমাদের সয়ে গেছে। এখন আর আমরা এটা নিয়ে ভাবিনা, স্পীড মানি দিতেই হবে। তিনি আরো বলেন, বন্দর জেটি থেকে এসব অসাধু কর্তাদের জন্য গাড়ীর যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানের সাথে যোগাযোগ (মোবাইলে) করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কোন মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন। এরপরও তার সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পার্সোনাল শাখা সুত্র জানায়, সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানের চাকরীটাই হয়েছে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে। সম্পূর্ণ ভূয়ার উপর ভর করে তার চাকরী চলছে। সুত্র আরো জানায়, তিনি যে সময়ে চাকরীতে ঢুকেছেন সেই সময়ে তার নিজ জেলা কোঠা ছিল না। ২০১৩ সালে গোপালগঞ্জের কোঠা না থাকলেও তিনি এ কোঠায় কিভাবে ঢুকলেন জানতে চাইলে ইবনে হাসান বলেন, তিনি সে সময় পোষ্য কোঠায় ঢুকেছেন।
তবে সে সময়ও (২০১৩) পোষ্য কোঠা ছিল না বলে বন্দরের পার্সোনাল শাখা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) প্রনব কুমার রায় বলেন, চাকরীর বিধিমালা লংঘন করে বন্দরে কেউ চাকরী নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।