‘স্বামীর কাটা মাথা পলিথিনে ঢুকিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয় পপি’
বিবাহিত অবস্থায় তোলা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি ফেসবুকে আপলোড করায় চীন থেকে ছুরি নিয়ে বাংলাদেশে এসে সাবেক স্বামী মইন উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করেছে রোকসানা আক্তার পপি।
শনিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম।
গত ১৭ আগস্ট ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন ফয়ে’স লেক এলাকার লেকসিটি মোটেল ফাইভের ২০৩ নম্বর কক্ষ থেকে মাইন উদ্দিনের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মাইন উদ্দিন ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার জয়পুর গ্রামের মৃত সিরাজুল হকের ছেলে। আসামি রোকসানা আক্তার পপি মিরসাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার মেহেদী নগর এলাকার আবু আহমেদের মেয়ে।
আমেনা বেগম আরো জানান, ২০১২ সালে মাইন উদ্দিনের সঙ্গে রোকসানা আক্তার পপির বিয়ে হয়। দাম্পত্য কলহের কারণে বিয়ের দুই বছর পর তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর ২০১৫ সালে রোকসানা আক্তার ডাক্তারি পড়তে চীনে যান। সম্প্রতি মাইন উদ্দিন তাদের কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি একটি ফেক আইডি থেকে রোকসানার আইডিতে পোস্ট করেন। এতে রোখসানা ক্ষিপ্ত হয়ে মইনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি বলেন, 'গত ১৫ আগস্ট আত্মীয় স্বজনদের অজান্তে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৩৯ ফ্লাইটে করে রোকসানা ঢাকায় আসেন। পরদিন রাতে মাইন উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে মোটেল ফাইভ আবাসিক হোটেলে যান। তারা ওই হোটেলে একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। রাত তিনটার দিকে মাইন উদ্দিনকে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে রোকসানা। হত্যার পর মইনের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে একটি পলিথিনে ঢুকিয়ে ওই কক্ষে রাখা প্লাস্টিকের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।
ঘটনার পর হোটেল থেকে কৌশলে বের হয়ে রোখসানা ঢাকায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সীতাকুণ্ডের বড় দারোগার হাট এলাকায় যাওয়ার পর তিনি বাস থেকে নেমে আবার চট্টগ্রাম আসে। এসময় নগরীর দুই নম্বর গেটের আলফালাহ গলি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
আমেনা বেগম জানান, ‘এই হত্যাকাণ্ডে রোখসানা ছাড়া আর কেউ সংশ্লিষ্টতার তেমন কোনো বিষয় পাওয়া যায়নি। তাদের ধারণা, আসামি একাই মাইন উদ্দিনকে হত্যা করেছে।'
জানা গেছে, মাইনকে যে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে তা সার্জারির কাজে ব্যবহৃত হয়। এই ছুরিটি রোকসানা চীন থেকে নিয়ে এসেছে।
খুলশী থানার ওসি শেখ মো. নাসির উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাইন উদ্দিনের বড় ভাই মো জাফর উদ্দিন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, রোকসানার সঙ্গে মৃত মাইন উদ্দিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে তারা দুইজন পরিবারের অমতে বিয়ে করে। পরে রোকসানার পরিবারের লোকজন বিয়ের বিষয়টি মেনে না নেওয়ায় ২০১৪ সালে মাইন উদ্দিন তাকে ডিভোর্স দেয়।