ঝিনাইদহে সেনা সদস্যকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যায় বাড়িতে শোকের মাতম ! গ্রেফতার দুই চাপাতি উদ্ধার !
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহে ডাকাতদলের দায়ের কোপে নিহত সেনা সদস্য সাইফুল ইসলাম (৩২) হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মিজানুর রহমান মিজার ও আকিমুল হোসেন। রোববার ভোরে তাদের সদর উপজেলার আসাননগর ও সাধুহাটী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের দাবী গ্রেফতারকৃতদের স্বীকোরোক্তি মোতাবেক সেনা সদস্য হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হাসুয়া উদ্ধার উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাতেই নিহতের পিতা হাবিজুদ্দীন হাবু অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
নিহত সাইফুল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সেনানিবাসের মেডিকেল কোরের ল্যান্স কর্পোরাল সৈনিক। তার বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামে। গত ১৭ আগষ্ট ১০ দিনের ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসেন সাইফুল। উল্লেখ্য, শনিবার রাতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সেনানিবাসের মেডিকেল কোরের সৈনিক সাইফুল ও তার ভাই নৌবাহীনির মনিরুল এবং শ্বশুর ছামছুল ইসলামকে সাথে নিয়ে তিনজন এক মটরসাইকেলে নিজ গ্রাম বংকিরায় ফিরছিলো।
নিহতের ছোট ভাই নৌবাহিনীর সদস্য মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা বদরগঞ্জ বাজার (দশমাইল বাজার) থেকে সাইফুলের শ্বশুর ছামছুল ইসলামকে সাথে নিয়ে তিনজন এক মটরসাইকেলে নিজ গ্রামে বংকিরায় ফিরছিলো।
তারা বাড়ির কাছাকাছি হাওনঘাটা মাঠের মধ্যে পৌছালে ১০/১২ জনের একদল ডাকাত দল জাম গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে গতি রোধ করে। এ সময় গরু ব্যবসায়ী ভেবে ডাকাতরা সাইফুলের সাথে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে ডাকাতরা প্রথমে সাইফুলের হাতে, ঘাড়ে ও পরে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ প্রিন্স তাবে মৃত ঘোষণা করেন। ডাঃ প্রিন্স জানান, অনেক আগেই রক্তক্ষরণজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ শনিবার মধ্যরাতেই দুই আটক করেছে। নিহত সাইফুলের স্ত্রী শাম্মি আক্তার দেশের সেরা একজন এ্যথলেটিক হিসেবে বহু দেশে ক্রীড়া নৈপুন্য প্রদর্শন করে খ্যাতি অর্জন করেন বলে জানান তার ভাসুর আব্দুল লতিফ। নিহত সাইফুলের দুই সন্তান রয়েছে। তাদের নাম আবু হামজা ও আবু হুরাইরা। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান হাসপাতালে ছুটে যান ও তিনি দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, দুর্বৃত্তদের ধরতে এলাকায় বিস্তর অভিযান শুরু হয়েছে। সেনা সদস্য সাইফুলের মৃত্যুর খবর বংকিরা গ্রামে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামের মানুষ দলে দলে সদর হাসপাতালে ভিড় করতে থাকে। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ জানান, দুর্বৃত্তদের ধরতে এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছি।
তিনি জানান, রোববার ভোরের দিকে পুলিশ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। এদিকে, নিহতের ভাই নৌসেনা মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বংকিরা পুলিশ ক্যাম্প থেকে ৫০০ গজ দূরে ডাকাত দলের মহড়া চলছিল। তাদের দায়ের কোপে আমার ভাই সেনা সদস্য সাইফুল ইসলাম নিহত হয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, আমি দৌড়ে পুলিশ ক্যাম্পে খবর দিলেও ঘটনা স্থলে যেতেও যথেষ্ট দেরি করে বংকিরা ক্যাম্প পুলিশ।
গ্রামবাসীরা সাংবাদিকদের নিকটে অভিযোগ করে বলেন, এই ক্যাম্পের পুলিশ ঠিক মত ঠহলে যায় না। এর আগেও ওখানে বোমাবাজি হয়েছে। দুষ্কৃতিকারীরা এলাকায় পরিচিত মাদক ব্যাবসায়ী, চাঁদাবাজ, বোমাবাজ ও চিহ্নিত সন্ত্রসী। এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা অত্যান্ত জরুরী। প্রসাশন পারেন না এমন কিছু নেই আমাদের বিশ্বাস।
এলাকার লোকজন এদের ভয়ে মুখ খোলেনা। আমাদের বিশ্বাস প্রশাসন এদের ধরে উপযুক্ত শাস্তি দিবে। ডাকাতদের চিনে ফেলার কারণে সাইফুলকে হত্যা করা হতে পারে বলে তার ছোট ভাই নৌসদস্য মনিরুল দাবী করেন। জনৈক হায়দার আলী জানান, ইতিপূর্বে অনেক ঘটনা ঘঠেছে ঐ জনপদে, ট্রাক ভর্তি মাছের খাদ্য ডাকাতি, পুলিশের সহায়তায় মাছের খাদ্য উদ্ধার হলেও ডাকাতির সাথে জড়িত সবাইকেই আইনের আওতায় আনতে পারিনি পুলিশ, খাড়া গোদা, গহেরপুর লাশের গাড়িতে ডাকাতি হলেও পুলিশ তদন্ত হয়নি।
খাড়া গো দা বাজারে পানির গাড়ি লুঠ হলেও কোন ডাকাত আজও পর্যন্ত সনাক্ত হয়নি। প্রতিনিয়ত গরু চুরি হলেও কোনটারই সঠিক তদন্ত না হওয়ায় এলাকার মানুষ হতাশ। এখন মানুষ এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলেও পুলিশকে জানাতে ইচ্ছুক নয়।
যার ফলে ক্রমাগত ভাবে একের পর এক এসব দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। যার ফলে আজ এই সেনা সদস্যর জীবনাবসান ঘটল। আমরা সঠিক তদন্ত ভিত্তিক আইনি ব্যাবস্থ্য গ্রহনের জন্য অনুরোধ করছি। এদিকে, রোববার সকালে নিহত সেনা সদস্যের লাশ ময়না তদন্ত শেষে তার যশোর সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে করে লাশ তার গ্রামের বাড়িতে পৌছে দেওয়া হয়। লাশ বংকিরা গ্রামে পৌছালে তার পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসির মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।