অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল গোপালগঞ্জের আলোচিত পরিবহন সেবা গ্রীন লাইন
নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ :
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেলো ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের আলোচিত পরিবহন সেবা গ্রীন লাইন। সেবা গ্রীন লাইন বন্ধ হওয়ার খবরটি তাদের কোম্পানির অফিসিয়ালের পেজের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেবা গ্রীন লাইনের অফিসিয়াল ফেসবুকে বলা হয়েছে “ম্যানেজমেন্ট এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ আগষ্ট থেকে রাস্তায় আর দেখতে পাওয়া যাবেনা সেবা গ্রীন লাইনকে।
তবে ১টা কথা বলতে পারি গর্বের সাথে সেবায় গোপালগঞ্জ বাসীকে দেখিয়েছে কি ভাবে সেবা দিতে হয়। সব জিনিস যেমন সব কিছুতে পরিপূর্ণ হয় না সেবার ও কিছু সংখ্যক লোক এর কারণে আজ এই অবস্থা। সবার প্রতি অনুরোধ ১টা জিনিসের বিচার করতে ভালো খারাপ সব দিক জেনে বিচার করবেন। আশা করি আরো উন্নত সেবা নিয়ে আবার ফিরে আসবে প্রিয় সেবা গ্রীন লাইন।”
উল্লেখ্য, সেবা গ্রীন লাইন শুধু ২০১৮ সালে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ২১ আগস্ট মঙ্গলবার মানুষ মেরেছে দুইজন, ২ এপ্রিল সোমবার মেরেছে ১ জন, ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার আহত করেছে ২০জনকে, ২৮ মার্চ বুধবার আহত করেছে ৭জনকে। এর আগে, ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বরাশুর নামক স্থানে যাত্রীবাহী কোচ সেবা গ্রীন লাইন ও সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারীসহ ৬ জন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। পত্র পত্রিকায় ৬ জন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হলেও নিহতের সংখ্যা ১২ জন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। একই দিন এ পরিবহনটি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের দাসের হাট নামক স্থানে আরেকটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায়। সেখানে নিহত না হলেও আহত হন বেশ কয়েকজন।
২০১৭ সালের ২৯ জুন ঈদুল ফিতরের সময় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর গেড়াখোলার পঞ্চবটিতে সেবা গ্রীন লাইনের ধাক্কায় মারা যান মাইক্রোবাসের যাত্রী বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খুড়লিয়াখালী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী হালিম আকন (৪৩), তাঁর স্ত্রী আসমা বানু (৩৫), ছেলে শিহাব (৮) ও সুজন (১৭) এবং শ্যালক বাদল হাওলাদার (৩২)।
বেপরোয়া গতির বাসটির মধ্যে ঢুকে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চন্ডিবরদী ব্রিজের কাছে শাজাহান ভূঁইয়া নামে এক মোটরসাইকেল চালক তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে একটি পার্শ্ব রাস্তা থেকে মহাসড়কে ওঠার সময় গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী সেবা গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস (ঢাকা মোট্রো ব-১৪-৮৮৮৭) তাদেরকে চাপা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল চালক শাজাহান ভূঁইয়া (৩৫) নিহত হন। অপর আরোহী তাঁর স্ত্রী বৈশাখীকে আহত অবস্থায় মুকসুদপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।২০১৬ সালের অক্টোবরে পিরোজপুরে সেবা গ্রীন লাইন (নং ব-১১-৬০৩৭) ও লোকাল সার্ভিস আল্লার দান দুটো গাড়ীই রং সাইড দিয়ে চলাচল করায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় থানা থেকে প্রায় ১ কিঃমিঃ দূরে কালিগঙ্গা নদীর সেতুর উত্তর প্রান্তে দোলা কাউন্টারের কাছে।
এ সময় আল্লার দান গাড়ীর ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী আহত হন। এ ঘটনায় চালক গোপালগঞ্জের সেলিম সিকদারকে আটক করে চালান দেয় আদালতে। এছাড়াও ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর ফরিদপুরের নগরকান্দায় গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী সেবা গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে দুই বাসযাত্রী নিহত ও ২৫যাত্রী আহত হয়।
২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকাগামী সেবা গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের মালেকের বাজারে রাস্তা পারাপারে সময় এক মাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন তিনি।
তার কোলে থাকা সাত মাসের শিশুকন্যা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা ওই শিশু কন্যাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শুধু এগুলোই নয় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গত দুই বছরে অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনার হোতা সেবা গ্রীণ লাইনের বাস। ওই পরিবহনের চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে বহুত। বেপরোয়া গতি, বাস চালুরত অবস্থায় চালকদের মোবাইলে গেমস খেলা, আর দুর্ঘটনার কারণে সেবা গ্রীন লাইন মহাসড়কের ‘দানব’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল।