সঠিক মূল্যায়নের অভাবে পিছিয়ে আছেন কন্ঠশিল্পী আবু হানিফ
নওগাঁ প্রতিনিধি
দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে বহু প্রতিভাবান শিল্পী, সুরকার ও সাহিত্যিক। কিন্তু সুযোগের অভাবে সম্ভাবনাময় অনেক প্রতিভার অপমৃত্যু ঘটছে হর-হামেশা।
প্রতিভার যথাযথ মূল্যায়ন বর্তমানে অনুপস্থিত। এমনই এক প্রতিভা সম্পন্ন কন্ঠশিল্পী মোহাম্মদ আবু হানিফ। একটু সুযোগ পেলেই হয়তো তার সুরের মাধুরীতে পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গনটাই মুখরিত হত। তার গানের কন্ঠ হৃদয়স্পর্শী, সঙ্গীতের প্রায় সবগুলো শাখায় তার অবাধ বিচরণ। আধুনিক, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, পল্লীগীতি, দেশাত্ববোধক গান সহ সকল বিষয়ে তার দখল রয়েছে।
বলছিলাম ১৯৯৪ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর মিরশ্বরাই উপজেলায় জম্ম নেয়া আবু হানিফের কথা । কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়াকালীন সময় থেকেই শিক্ষক-শিক্ষিকার অনুপ্রেরণায় তার সঙ্গীত চর্চার পথকে প্রশস্ত করেছে। এবং তাদের উৎসাহে আবু হানিফকে এতোদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে।
চমৎকার মন জুড়ানো কন্ঠের জন্য আবু হানিফ এ পর্যন্ত বহু সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক পুরষ্কার সামগ্রী ও প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামদ, নাথ, গজলসহ দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবুও কেমন জানি আধো অদৃষ্টান্তান্তই থেকে গেলেন হানিফ, দৃষ্টি পড়েনি মফস্বলে থাকা কোন মহাজনের দৃষ্টিতে, আবু হানিফের গানের প্রতি আগ্রহ দেখে তার শিক্ষক-শিক্ষিকা তাকে উৎসাহ যোগায়, যা সে আজও চর্চা করেন, তার গানে মুগ্ধ, বিমোহিত হবেন আপনিও। গান গেয়ে গানের মাধ্যমে মানুষের মনে আনন্দ দান, একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হওয়াই তার একমাত্র লক্ষ। এক প্রশ্নের জবাবে কন্ঠ শিল্পী হানিফ বলেন, শিল্প আমার অস্তিত্ব, আমার প্রেম, শিল্পী আমার স্বজন, আমার ভালোলাগার ভালোবাসা, শৈল্পিক স্বাজাত্য আমার প্রশান্তির প্রণয়ের প্রগাঢ় নিকুঞ্জ। আমি শিল্পের জন্য শিল্পী হতে চাই।
দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট হানিফ। সংসারে অভাবের তাড়নায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ চুটিয়ে গানকে পেশা হিসেবে নিতে চায় হানিফ। সে একজন বড় শিল্পী হতে চায়। কিন্তু সুযোগ হবে কি কখনো? সেটিই যেন প্রশ্ন (?) থেকে যায়। মফস্বলের শিল্পীরা চিরদিনই অবহেলিত। সে বলে আমাদের খোঁজ খবর কেউ রাখেনা, পরিচর্চা গুনে যেমন একটি বাগান ফুলে-ফলে সৌন্দর্য মন্ডিত হয়ে ফুটে উঠে, শিল্পীর তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠে এক একটি চিত্র। ঠিক তেমনি পূর্ণ মন্ত্র ও অফুরন্ত অনুপ্রেরণা সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করে। কারণ উচ্চ শিক্ষিত কিংবা গুণিজন হয়ে কেউ জন্মে না। অনুকুল পরিবেশে সুশিক্ষা গ্রহণের ফলশ্রুতিতেই সমাজে গুণীজনের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
আবু হানিফ মিরশ্বরাই উপজেলার ৩ মাইল পশ্চিমে দরগারহাটের স্থায়ী বাসিন্দা। উচু নীচু প্রাকৃতিক ঘেরা দরগারহাট গ্রামে তার বাস। সম্প্রতি এক মনোরম সন্ধ্যায় তার নিজ বাড়ীতে একান্ত আলাপ চারিতায় জানা যায় আবু হানিফ সুযোগের অভাবে কোন ভালো পর্যায়ে পৌচাতে পারছেন না তিনি, তাই জীবিকার তাগিদে ব্যস্ততম শহর বন্দর নগরী চট্টগ্রাম শহরেই একটি নিরাপত্তা কর্মী সার্ভিস সিকিউরিটি কেম্পানী তে একজন নিরাপত্তা কর্মী দেখবাল হিসেবে ও পাশাপাশি একটি আইটি কর্ণার তথা কম্পিউটারের দোকান করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন হানিফ, তবে সব সময়ই তার চিন্তা চেতনা গানের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দান করা এবং একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাই জীবনের ব্রত।