অটোমেশন-সিসি ক্যামেরার আওতায় বেনাপোল বন্দর
শহিদুল ইসলাম,বেনাপোল প্রতিনিধি।
আমদানি পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বাণিজ্য গতিশীল করতে দীর্ঘদিন পর অবশেষে অটোমেশন ও সিসি ক্যামেরার আওতায় এলো দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর। এতে বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে আশা করছে ব্যবসায়ীরা।ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরের বিভিন্ন পণ্যগারে কাস্টমস হাউজের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা লাগাতে দেখা যায়। এছাড়া অটোমেশনের প্রক্রিয়ায় বন্দরের কয়েকটি দফতরে কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশ অনেক আগেই ডিজিটাল হলেও বেনাপোল বন্দর ছিল অনেকটা আধুনিকতার ছোয়ার বাইরে। এতে নানান ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বাণিজ্য সম্পাদন করতে হতো ব্যবসায়ীদের। এখন সিসি ক্যামেরা ও অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু করায় তারা সে দুঃচিন্তা থেকে অনেকটা মুক্ত হবে।
আর বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, বেনাপোল বন্দরের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে আন্তরিক। সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য সম্পাদনে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের উন্নয়ন হবে।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। বেনাপোল বন্দর সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দাতা হলেও ছিল অবহেলিত। এতে ব্যবসায়ীদের যেমন লোকসান পোহাতো হতো তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়েও বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। দেরিতে হলেও এখন প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় সে প্রভাব কমতে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে প্রথম থেকে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এপথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। দেশের স্থল পথে যে পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার ৭৫ শতাংশ আসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এ বন্দর থেকে ভারতের বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব ৮৪ কিলোমিটার। মাত্র চার ঘণ্টা সময়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাক কলকাতা থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে পৌঁছাতে পারে বেনাপোল বন্দরে। প্রতিবছর সরকার এ বন্দর থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। আর ১৫ হাজার মানুষের কর্মস্থান এখানে। সবকিছু মিলে এ বন্দরের গুরুত্ব ব্যবসায়ীদের কাছে অপরিসীম।
বেনাপোলের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বন্দরে বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যা ও অব্যবস্থাপনায় অনেক ব্যবসায়ীরা লোকসানের কবলে পড়ে এ বন্দর ছেড়েছিল। এখন আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ হওয়ায় যেমন বাণিজ্যে গতি ফিরবে তেমনি রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
বেনাপোল আমদানি রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, দেরিতে হলেও বেনাপোল বন্দরে সিসি ক্যামেরা ও অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এতে আমরা অনেকটা স্বস্তিবোধ করছি। এতে যেমন কাজের গতি বাড়বে তেমনি নিরাপত্তাও অনেকটা নিশ্চিত হবে।
ভারত বাংলাদেশ ল্যান্ড পোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বন্দরে সিসি ক্যামেরা ও অটেমেশন প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দিতে হবে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা বলেন, আগামীতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাইরের দেশের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বাড়বে। ইতোমধ্যে আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। আগামীতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৪শ ক্যামেরা বসবে বন্দর এলাকায়। তিনি বন্দরকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস জানান, বাণিজ্য গতিশীল ও আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরে অটোমেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অটোমেশন চালুতে এখন ব্যবসায়ীরা ঘরে বসে বন্দর পণ্যগারে রক্ষীত আমদানি পণ্যের খোঁজ খবর রাখতে পারবেন। যাতে সহজে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারেন তার জন্য আমদানি কারকদের প্রতিনিধি সব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের দুই জন করে সদস্যদের বন্দরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।