মুন্সীগঞ্জের সাংবাদিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে সাংবাদিক আবুসাঈদ সোহান
রুবলে মাদবর , মুন্সীগঞ্জ প্রতনিধি:
মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে ‘মুন্সীগঞ্জ জার্নালিষ্ট সোসাইটি’। সংবাদকর্মীদের অধিকার আদায়, সুসংগঠিত করা, সংবাদকর্মীদের বিপদে অর্থ সাহায্য, পহেলা বৈশাখ, ইফতার মাহফিল, আনন্দ ভ্রমণ, বিভিন্ন উৎসবে উপহার সামগ্রী প্রদান, খেলাধুলা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ) এ সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী, কবি ও সাংবাদিক মু.আবুসাঈদ সোহান।
বলা বাহুল্য, বর্তমানে সর্বত্র সংবাদকর্মীদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে। দিন দিন এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। এজন্য যেমন দায়ী সমাজের মানুষ, তার চেয়ে বেশী দায়ী স্থানীয় সাংবাদিককের অনৈক্য, রাজনৈতিক দলাদলি, যোগ্যতা সম্পন্ন ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের অবহেলা, নিজেদের মধ্যে বিবাদ সর্বোপরি স্বার্থপর- আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব। আর এসবকে পুঁজি করে কিছু সাংবাদিক নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে মুন্সীগঞ্জের সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো অকার্যকর হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার প্রচেষ্টায় ‘মুন্সীগঞ্জ জার্নালিষ্ট সোসাইটি’ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজে সংবাদকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, অরাজনৈতিক মনোভাব তৈরী, নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলা, যোগ্য ও জ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, নিজেদের স্বচ্ছল করে গড়ে তোলা, সংবাদকর্মীদের নিজের কর্ম পরিধি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা- এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সমাজের সকল মানুষের জন্য কাজ করা। বিশেষভাবে অসহায়, দুঃস্থ ও দরিদ্রদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করার পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে বলে জানা যায়।
২০১৬ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ ভোরে বর্ণাঢ্য র্যালী দিয়ে মুন্সীগঞ্জ জার্নালিষ্ট সোসাইটির যাত্রা শুরু হয়। এদিন সকালে পান্তা ইলিশ, দুপুরে জেলা স্টেডিয়ামে প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ ও রাতে এম.জে রিসোর্টে বেড়ানো ও রাতের খাবার খেয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৩ জুলাই ইফতার মাহফিল, ২৯ জুলাই ঈদ পুনর্মিলনী, প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ২০১৮ সালের ২৮ জুন পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া সফর উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান ছিল। মাঝের দিনগুলিতে সংবাদকর্মীদের সংগঠিত ও সংবাদকর্মীদের সাহায্য সহযোগিতায় ব্যস্ত থাকে সংগঠন। সবশেষ ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর নিজেদের উদ্যোগে একই রকম শার্ট ও ব্লেজার তৈরী করে সংগঠনের সদস্যরা। এ সংগঠনটি কখনই কমিটি গঠন নিয়ে ভাবেনি, এখনও ভাবছে না। এখানে সকল সদস্যকেই সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন সংগঠনটির দলনেতা মু.আবুসাঈদ সোহান। বর্তমানে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। ভবিষ্যতে সদস্য আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এক নজরে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবী, কবি ও সাংবাদিক মু.আবুসাঈদ সোহান
মু.আবুসাঈদ সোহান একাধারে আইনজীবী, কবি ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ শনিবার (২৫ শে ফাল্গুন ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ) মুন্সীগঞ্জ শহরের বাগমামুদালী পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৃত. ডাঃ মোঃ নেওয়াজ আলী দেওয়ান, মাতাঃ সুফিয়া আক্তার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। দুই সন্তানের জনক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর তিনি নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন কর্মকান্ডে। স্কুল জীবন থেকেই সংস্কৃতি ও মানবকল্যাণধর্মী সংগঠন তাকে আকর্ষণ করতো। এ কারণে কর্মজীবনে এসেও তিনি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির হানছানি উপেক্ষা করতে পারেননি।
তিনি ১৯৮৫ সালে ইদ্রাকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করেন এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে মুন্সীগঞ্জ কে.কে. গভ: ইনস্টিটিউড থেকে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে মুন্সীগঞ্জ সরকারী হরগঙ্গা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচ.এস.সি ও ১৯৯৫ সালে বি.এ পাশ করেন। তিনি এইচ.এস.সি পরীক্ষায় ভূূগোলে লেটার মার্কসহ মুন্সীগঞ্জ জেলায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৯৭ সালে ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ২০০২ সালে মুন্সীগঞ্জ ল’ কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্রী লাভ করেন।
স্কুল পর্র্যায় থেকে লেখালেখি এবং কলেজ পর্যায় থেকে সাংবাদিকতা শুরু করেন মু.আবুসাঈদ সোহান। স্কুল ও কলেজের সাময়িকীতে বিভিন্ন কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। ২০১৬ সালে ঢাকার বই মেলায় ‘ভালবাসার মেঘমালা’ নামের একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় অনুপ্রাস কবি সংগঠনের সাথে জড়িত হন। কলেজ যুব রেডক্রিসেন্টের দলনেতা ছিলেন। পরবর্তীতে যুব রেডক্রিসেন্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার যুবপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, মুন্সীগঞ্জ জেলা ইউনিটের আজীবন সদস্য। মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনাকালীন খালইষ্টে শিশু-কিশোরদের নিয়ে ‘নবজাগ্রত খেলাঘর’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন করেন। কলেজ জীবন পেরিয়ে তিনি ‘উদ্ভাস সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামের একটি সংগঠন করে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আলদী কাঠাদিয়া গ্রামে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বই ও পড়াশোনা, দু:স্থ মহিলাদের সেলাই মেশিন প্রদান করে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেন। এছাড়া ফ্রি চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। গ্রামবাসী এ কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে উদ্ভাস সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’র নামে ৩ শতাংশ জমি দান করেন। বর্তমানে সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
সাংবাদিকতার জীবনে সোহানের ‘সাপ্তাহিক মুন্সীগঞ্জ’ দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে আর.টি.ভি ও জাতীয় দৈনিক মুক্তকন্ঠসহ বিভিন্ন টেলিভিশন ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া প্রয়াত ভাষা সৈনিক সাংবাদিক নেতা সফিউদ্দিন আহমেদের ‘সাপ্তাহিক বিক্রমপুর বার্তা’ পত্রিকায় সম্পাদক এবং বেশ কয়েকটি দৈনিকে নির্বাহী সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাব এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে জাতীয় দৈনিক সবুজ নিশান পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মু.আবুসাঈদ সোহান ২০০৭ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেটার তৈরী ও জেলাব্যাপী ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ‘মুন্সীগঞ্জ ক্রিকেট একাডেমী’ প্রতিষ্ঠা করেন। একাডেমীর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একাডেমী থেকে বিপুল সংখ্যক ছেলে মেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে সুনামের সাথে খেলছেন। তিনি ‘মুন্সীগঞ্জ স্পোর্টস একাডেমী’ প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন খেলাধূলার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মৃত্তিকা’র সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংগঠন মুন্সীগঞ্জের সুধীজনকে সম্মাননাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। সোহান সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া সংগঠনের পাশাপাশি কবি সংগঠনেও জড়িত। তিনি কবি পরিষদ ও সাহিত্য পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন।