একটি ছবি, পেইন্টিং কিংবা ভাস্কর্য যে কী পরিমাণ অর্থবহ,
ডা. মাহবুবর রহমান
একটি ছবি, পেইন্টিং কিংবা ভাস্কর্য যে কী পরিমাণ অর্থবহ, বাগ্ময়, হৃদয় ভেঙ্গে যাবার মত বেদনার হতে পারে তা গতকাল আবার অনুভব করলাম। জেনেভা শহরের বিশাল লেকপাড়ে মেলানকলি নামের এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করেন রোমানিয়ার বংশোদ্ভূত সুইজারল্যান্ডের ভাস্কর আলবার্ট জর্জিও। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ চরম বিষন্নতায় জর্জরিত হয়ে সবকিছু হারিয়ে বুকভরা অসীম শূন্যতা নিয়ে নতমুখে শেষবারের মত ভেঙ্গে পড়ার অপেক্ষায় আছেন। তাঁর শূন্যবক্ষ, জীর্ণ শরীর, নুয়ে পড়া দেহভঙ্গি সর্বস্ব হারানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ভাস্কর্যটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশের সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ সন্তানহারা মা বাবা (এখন পর্যন্ত ২১ মিলিয়নের বেশি মানুষ ) তাঁদের কষ্টের কথা, কান্নার কথা বলে চলেছেন। নিজে বেঁচে থাকা অবস্থায় সন্তান হারানো যে কী দুঃসহ অসীম বেদনার তা কেবল ভূক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে পারেন। কয়েকটি মন্তব্য কেবল তুলে ধরছি:
১। শিল্পী আমার বেদনার স্থান স্পর্শ করেছেন। আমার পাঁচ বছরের প্রিয়তম স্যামু্য়েলকে ২০১২ সালে হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব।
২।গতবছর আমার ছেলেটি হারাই যখন আমার বয়স ৩৮। আমি এখন বৃদ্ধা। আমার বুক এই ভাস্কর্যর মত। আমি এখন মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি।
৩। যাঁদের সন্তান অকালে মারা যায়, আত্মহত্যা করে, মাদকাসক্ত হয় তাঁদের বেদনা মূর্ত হয়ে উঠেছে।
৪। আমার ছেলে জাস্টিনের মৃত্যুতে সহস্র পৃষ্ঠার বই লিখতে পারি কিন্তু এই ভাস্কর্যটি তারচেয়েও বেশি বলে দেয়।
৫। যে নিষ্ঠুর গর্ত আমার বক্ষবিদির্ণ করেছে তা আর কিছুতেই পূর্ণ হবার নয়। এটি যেন আমারই কংকাল।
৬। আমাদের কারো জীবনেরই কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই আসুন সবাই একে অন্যের কষ্টে সমব্যথী হই, সান্ত্বনার পরশ নিয়ে পাশে দাঁড়াই।
আমার বন্ধু বেলাল আর কেতকীর কথা মনে পড়ে গেল। তাদের বক্ষবিদির্ণ করে অকালে কেমন করে ধ্রুব চলে গেল ! কোন সান্ত্বনাই তাদের কষ্ট লাঘব করবে না। কিন্তু তারপরও বলতে ইচ্ছে হয় -
“তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই -
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই।”
লেখক: সিনিয়র কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও সিসিউ ইনচার্জ
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)