খালেদা ভালো আছেন, ইফতার বানিয়ে দিচ্ছেন ফাতেমা
ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া এখন রোজাও রাখছেন। হাসপাতালে খালেদার সঙ্গে থাকা গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম প্রতিদিন তার পছন্দ মতো যা ইফতার তৈরি করছেন তাই তিনি খাচ্ছেন।
রোজার ঈদের প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে খালেদার চিকিৎসা এবং সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে এমন খবর দিয়েছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক।
বুধবার সকালে হাসাপাতালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “উনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। উনি ইনসুলিন নিচ্ছেন এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ মুখেও গ্রহণ করছেন।
“আর্থরাইটিসের ব্যথা অনেক কমে গেছে। উনার দুর্বলতা অনেক ইম্প্রুভ করেছে, দুর্বলতা এখন নেই। নতুন কোনো সমস্যার কথা এখন বলেননি। উনি কমফরটেবল আছেন, ভালো আছেন।”
কিছুদিন আগে খালেদা জিয়ার জিহ্বায় ঘা (ফাংগাল ইনফেকশন) হলেও তা ৯০ শতাংশ সেরে গেছে বলে জানিয়ে মাহবুবুল হক বলেন, “এখন উনি নরমাল খাবার খাচ্ছেন। রোজা রাখছেন। ছোলাসহ অন্যান্য ইফতারের আইটেমগুলো খাচ্ছেন। উনার চয়েজ মতো ইফতারের আইটেমগুলো উনার সাথে যে মেয়েটা আছে সে রান্না করে দেয়। কেবিনের পাশে ছোট একটা কিচেন আছে সেখানে চুলা আছে।”
গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা খাটছেন খালেদা জিয়া। তাকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে। সেখানে বন্দি তিনি একাই।
চিকিৎসার জন্য তাকে গত ১ এপ্রিল বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিসসহ বয়সজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করার সময় তাকে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া তিনি ডায়াবেটিসেও ভুগছেন।
মাহবুবুল হক বলেন, “উনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। উনি গ্রাজুয়ালি ইম্প্রুভিং। উনি যে সমস্যাগুলো নিয়ে এসেছেন সেগুলো ক্রনিক ডিজিজেস, এগুলো একটু সময় লাগে, খুব স্লো ইম্প্রুভ হয়।
“উনার ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিসসহ অন্যান্য যে দুর্বলতা ছিল এগুলো অনেক ইম্প্রুভিং। উনি খুব ভালো আছেন। উনার যে বয়সে যে সমস্যা…নিয়ে উনি খুবই ভালো আছেন আমি এটা অবশ্যই বলতে পারব।”
বিএসএমএমইউতে খালেদার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানিয়ে আসছেন বিএনপি নেতারা।
এ পর্যায়ে হাসপাতালের পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, “আমি তো প্রতিদিন যাই না। আমার বোর্ড প্রতিদিন যায়। যত দিন আমি উনার কাছে গিয়েছি, উনি সহজ, সানন্দে, হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেছেন।
“আমরা প্রায় দুই মাসে কখনও দেখি নাই যে, উনি একটু এনোয়েড হয়েছেন, আমাদের ওপর আনসেটিসফাইড। আমি মরে যাচ্ছি, আমার চিকিৎসা দিচ্ছে না- এরকম কোনো শব্দ…..।
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, “মিডিয়া গরম করার মতো যে বক্তব্য মানুষকে জানানো হয়, তা না জিজ্ঞাসা করেই। একজন রোগী সম্পর্কে যদি বলতে হয় আমাদের জিজ্ঞাসা করবে না? আমাদের বোর্ডকে জিজ্ঞাসা করবে না? এটা সঠিক নয়। উনি চিকিৎসায় সেটিসফাইড।
“উনাকে নিয়ে বেশ কয়েকদিন আগে মিডিয়াতে বলা হয়েছিল যে, উনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আসলে সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, আমাদের মেডিকেল বোর্ড ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ না করেই। ওই সংবাদ মনগড়া, ভুল তথ্য।”
খালেদা জিয়া নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে যাওয়ার পর থেকে তার কয়েকটি মামলার বিচার সেখানে অস্থায়ী আদালতে চলছিল। সম্প্রতি অস্থায়ী আদালত কেরানীগঞ্জের কারাগারে সরিয়ে নেওয়ার গেজেট জারি হয়েছে। চিকিৎসার পর খালেদাকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে নেওয়া হবে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কবে নাগাদ তাকে কারাগারে নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে হাসপাতাল পরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, “কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদেরকে কিছু বলেনি।”
“আসলে আমরা চাচ্ছি যে, উনার সেটিসফেকশন। উনি যদি নিজেই ফিল করেন যে- আমি সম্পূর্ণ ভালো আছি, এখন আমি যেতে চাই..সিদ্ধান্তটা উনিই দিক। আমরা সেটাই চাই। আমরা কোনো রকমের প্রেসার ক্রিয়েট করছি না যে, আপনি চলে যেতে পারেন বা যান।উনি যদি মনে করেন কফরটেবল আর উনার হসপিটালে থাকার দরকার নাই।”
খালেদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক জিলান মিয়া সরকার, হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করীম, উপ-পরিচালন খুরশেদ আলম, সহকারী পরিচালক বেলাল সরকার ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।