নড়াইলে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হলো ৮১ বছরের বৃদ্ধা মা কে নড়াইল প্রতিনিধি
ছেলে ও পুত্রবধূর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক বৃদ্ধ মা স্থানীয় মন্দিরে আশ্রয় নেবার খবর পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার শেফালী রাণী রায় (৮১) লোহাগড়া পৌর এলাকার পোদ্দারপাড়ার মৃত চিত্ত রঞ্জন রায়ের স্ত্রী।
মঙ্গলবার (২৮ মে) রাতে খবর পেয়ে পোদ্দারপাড়া সার্বজনীন পুজা মন্ডপে আশ্রয় নেয়া বৃদ্ধাকে দেখতে ভীড় করে স্থানীয় মানুষজন। খবর পেয়ে একদল সাংবাদিক ওই মন্দিরে উপস্থিত হয়ে নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধার সাথে কথা বলেন।
এ সময় সাংবাদিক উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্ত ছেলে শংকর রায় গভীর রাতে মন্দিরে এসে মাকে এক প্রকার জোর করে বাড়িতে নিয়ে যায়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে লোহাগড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আমান উল্লাহ আল বারী ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছেন। অভিযুক্ত শংকর রায় ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ওই বৃদ্ধা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বড় ছেলে শংকর রায় ও তার স্ত্রী কণা রায়’র অব্যহত নির্যাতনের মুখে নিজ বাড়িতে থাকতে পারছিলেন না। কারনে-অকারনে ছেলে শংকর ও তার স্ত্রী কণা রায় তাকে মারপিট করে আসছিল।
তার ছেলে ও পুত্রবধূ নির্যাতনের এক পর্যায়ে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে তিনি মঙ্গলবার সকাল ৬ টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের পোদ্দারপাড়া সার্বজনীন পুজা মন্ডপে আশ্রয় নেন। বৃদ্ধা তার স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতেই জীবনের শেষ সময় টুকু থাকতে চান।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বৃদ্ধার ২ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে শংকর রায়, কৃষি ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক ছিলেন। শংকর রায় পিতার রেখে যাওয়া প্রায় অর্ধ কোটি টাকার জমির ওপর দ্বিতল ভবনে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন।
অপর ছেলে বিশ্বনাথ রায়, যশোরের ঢাকা রোডে মোটর পার্টস ব্যবসায়ী। স্ত্রী কৃষ্ণা রায় ও সন্তানদের নিয়ে যশোরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। মায়ের তেমন একটা দেখভাল তিনি করেন না। মেয়ে মিনতী সাহা, কনিকা সাহা, মনিকা সাহা ও ছবি রাণী সাহা, সকলকেই ভাল পাত্রস্থ করেছেন চিত্ত রঞ্জন ও বৃদ্ধা শেফালী। মেয়ে মিনতী সাহার বড় ছেলে আমেরিকা প্রবাসী। অন্য মেয়ের সন্তানরাও বেশ বিত্তশালী।
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে পোদ্দারপাড়া মন্দিরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে শংকর রায় সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মা রাগ করে বাড়ি থেকে এসে মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি মাকে বাড়িতে নেওয়ার জন্য এসেছেন। তবে তিনি মায়ের ওপর নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন।
এ সময় স্থানীয়রা আশংকা প্রকাশ করে জানান, এখন মাকে ভালোবাসার কথা বলে বাড়িতে নিয়ে গেলেও শংকর ও তার স্ত্রী বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বৃদ্ধাকে ফের মারপিট করবে । স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করে বলেন, শংকর ও তার স্ত্রী ওই বৃদ্ধাকে বাড়ি ছাড়া করার জন্য প্রায় দিনই গভীর রাতে ওই বৃদ্ধাকে মারধোর করে আসছে। বিষয়টি এলাকায় গা সওয়া হয়ে গেছে।
লোহাগড়া থানায় সদ্য যোগদানকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো .মোকাররম হোসেন জানান, বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ ওই বৃদ্ধার সাথে কথা বলেছেন। ওই বৃদ্ধা পুলিশকে তার ওপর নির্যাতনের বিষয়টি অবহিত করলেও তিনি অভিযুক্ত ছেলের নামে থানায় কোন অভিযোগ করবেন না। তবে পূণরায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করবেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।