খেলও দেখালো বাংলাদেশ
রিভিউটা যদি আগেই নষ্ট হয়ে না যেতো! এই আফসোসটাই যেনো ম্যাচশেষে বড় হয়ে দেখা দিলো। ৪৫ তম ওভারে মিচেল স্যাটনারকে শক্তভাবেই বিট করেছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। বলটি নিশ্চিতভাগেই স্ট্যাম্পে ছিল। লেগেছি প্যাডে। কড়া আবেদনেও সাড়া দিলেন না আম্পায়ার। টিভি রিপ্লে দেখে মনে হল, বল ব্যাটে লাগেনি। কিন্তু তারপরেও মাশরাফির কিছুই করার নেই। রিভিউ যে শুরুর দিকেই নষ্ট করে ফেলেছেন।
এমন আফসোস আছে আরো কয়েকটা। ব্যাটে যদি আর কিছু রান হতো! মুশফিক যদি উইলিয়ামসনকে নিশ্চিত রানআউট থেকে ‘বাঁচিয়ে’ না দিতেন। তাহলে টেইলের সঙ্গে তার শতোর্ধ রানের জুটিটা হতো না। কিন্তু এই আফসোসই তো ক্রিকেটের সৌন্দর্য্য! এসবকিছু মেনে নিয়ে লড়ে যেতে হয়। আর সে লড়াইটা করে দেখালো টাইগাররা।
নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ৪০ ওভারের দিকে টিভি পর্দায় দুদলের জয়-পরাজয়ের প্রেডিকশনে বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখানো হচ্ছিল ৫ শতাংশ। দারুণ খেলতে থাকা রস টেইলের সঙ্গে তখন জুটি জমিয়ে তুলছেন জিমি নিশাম। কিন্তু অসহায় হার মেনে নেয়ার দিন কি আর আছে! পরের চার ওভারের নাটকীয়তায় টিভি পর্দায় বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা দেখা হল ৪৫ শতাংশ।
ততক্ষণে পরাক্রমশালী টেইরকে ফিরিয়ে দিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। অন্যপ্রান্ত থেকে কলিন ডি গ্রান্ডহোমকে তুলে নেন সাইফুদ্দিন। এরপর জিমি নিশামকে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের টুটি চেপে ধরেন মোসাদ্দেক। শেষ দিকে দারুণভাবে চেপে ধরলেও ভড়কে যাননি মিচেল স্যাটনার। ঠান্ডমাথায় ম্যাচ বের করে নেন ১২ বলে ১৭ রান করে।
তার আগে কিউইদের শুরুটা ভালো না হলেও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে সঙ্গে নিয়ে রস টেইলের দৃঢ়তায় সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যায় নিউজিল্যান্ডকে।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট তুলে নেন মেহেদী মিরাজ, সাকিব, মোসাদ্দেক এবং সাইফুদ্দিন।
এদিকে কেনিংটন ওভালে এদিন টসভাগ্যও সহায় হয়নি মাশরাফির। আগে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের সামনে বড় লক্ষ্য দাঁড় করাতে পারেনি টাইগাররা। ২৪৪ রানে অলআউট হয়।
দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও তারা ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। সৌম্যকে ২৫ রানে বোল্ড করেন ম্যাট হেনরি। ২৪ রানে তামিমকে বোল্টের তালুবন্দ্বি করান লুকি ফার্গুসন।
সাকিব-মুশফিক ভালোই খেলছিলেন। তবে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের ভুল বুঝাবুঝির বলি হয়ে মুশফিককে ফিরতে হয় রান আউট হয়ে।
বাজে এই আউটের লোকসান আর পুষিয়ে উঠতে পারেনি টাইগাররা। সাকিবের ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ ৬৪ রান আসলেও অন্যরা সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। মাহমুদুল্লাহ ৪১ বল মোকাবেলা করলেও মাত্র ২০টি রান যোগ করতে সক্ষম হন স্কোরবোর্ডে। মোসাদ্দেক ১১ রান করেন ২২ বলে। শেষ দিকে মেমেদী মিরাজ এবং মাশরাফি ব্যর্থ হলেও সাইফুদ্দিনের ২৯ রানের ইনিংসটি মাঝারি সংগ্রহ এনে দেয়।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ম্যাট হ্যানরি একাই তুলে নেন চারটি উইকেট। এছাড়া ট্রেন্ট বোল্ট দুটি এবং লক ফার্গুসন, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও মিচেল স্যান্টনার একটি করে উইকেট শিকার করেন।
স্কোর:
বাংলাদেশ ২৪৪/১০ (৪৯.২)
তামিম ইকবাল ২৪ (৩৮)
সৌম্য সরকার ২৫ (২৫)
সাকিব আল হাসান ৬৪ (৬৮)
মুশফিকুর রহিম ১৯ (৩৫)
মোহাম্মদ মিঠুন ২৬ (৩৩)
মাহমুদুল্লাহ ২০ (১১)
মোসাদ্দেক হোসেন ১১ (২২)
সাইফুদ্দিন ২৯ (২৩)
মিরাজ ৭ (৯)
মাশরাফি ১ (২)
মোস্তাফিজুর ০* (০)
বোলার:
ম্যাট হেনরি ৯.২-০-৪৭-৪
ট্রেন্ট বোল্ট ১০-০-৪৪-২
লুকি ফার্গুসন ১০-০-৪০-১
কলিন ডি গ্রান্ডহোম ৮-০-৩৯-১
জেসম নিশাম ২-০-২৪-০
মিচেল স্যাটনার ১০-০-৪১-১
নিউজিল্যান্ড ২৪৮/৮ (৪৭.১)
গাপটিল ২৫ (১৪)
মুনরো ২৪ (৩৪)
উইলিয়ামসন ৪০ (৭২)
টেইলর ৮২ (৯১)
লাথাম ০ (৪)
নিশাম ২৫ (৩৩)
গ্রান্ডহোম ১৫ (১৩)
স্যাটনার ১৭* (১২)
হেনরি ৬ (৮)
লুকি ফার্গুসন ৪* (৩)
বোলার
মাশরাফি ৫-০-৩২-০
মিরাজ ১০-০-৪৭-২
মোস্তাফিজ ৭.১-০-৪৮-০
সাকিব ১০-০-৪৭-২
সাইফুদ্দিন ৭-০-৪১-২
মোসাদ্দেক ৮-০-৩৩-২
নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা রস টেইলর।