ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে পশুহাট, রয়েছে মেডিসিন প্রয়োগে মোটা তাঁজা করনের ব্যাপক অভিযোগ
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঝিনাইদহে পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে জেলাজুড়ে পশুহাট, ব্যাপারিরা দেশেওে বিভিন্ন প্রান্তে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে গরু। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ঝিনাইদহ সদরের পশুহাট, বারবাজার, গান্না, সাধুহাটির বোড়াই নতুন গরুর হাট, শৈলকুপা বাজারে কোরবানীর পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সেই সাথে সাধারন ক্রেতাদের ও ভীড় করতে দেখা যাচ্ছে। কোরবানীর ঈদের গরু ও ছাগল কেনা বেঁচা শুরু হয়েছে। আবার খামার গুলোতে চলছে পশু হৃষ্টপুষ্ট করনের কাজ। দেশি ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাঁজা করছেন তারা। অনেক খামারি কোরবানি ঈদে গরু বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ করার আশা করছেন। মোটা তাঁজা করনের বিষয়ে খামারি বাদে ও গ্রাম এলাকায় অনেকে বাড়তি লাভের আশায় একের অধিক গরু ও ছাগল পালন করে থাকে। তারা বিভিন্ন মেডিসিন খাওয়ায়ে মোটা তাঁজা করছেন ক্রেতাদের কাছ থেকে ভাল দাম পাবার জন্য।
একেকটি বড় খামারে ৫০ থেকে ১০০টি গরু এবং ছোট খামারে ৫ থেকে ২০টি গরু মোটা তাঁজা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এসব খামার থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলার এসব খামার গুলোতে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি মোটাতাঁজা করা হচ্ছে নেপালি, হরিয়ানা, সিন্ধি, শাহীওয়াল জাতের গরু। মহিদুল ইসলাম খামারি জানায়, গত বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় এক একটি গরু কিনে চার থেকে ছয় মাস লালন পালন করে দুটি দেড় লাখ বিক্রি করেছিলেন।
মোটাতাঁজা অরে অনেক ভাল দামে বিক্রি করতে পরেছিল। এসব গরু মোটাতাঁজা করতে কোন ওষুধ বা ইঞ্জেকশন দেয়া হয় না। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, খামার গুলোতে নজরদারী রাখা হচ্ছে যাতে করে ক্যামিক্যালের মাধ্যমে কোরবানির পশু মোটা তাঁজা করা না হয়। খামারীদের দাবি দেশে পর্যাপ্ত পরিমানে কোরবানির পশু রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে ভারত বা অন্য কোন দেশ থেকে যদি পশু আমদানি করা হয় তাহলে হুমকির মুখে পড়বে দেশীয় খামারীরা।
এবছরও সমপরিমান কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদার অনুপাতে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু মজুদ রয়েছে খামারিদের কাছে। কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা গবাদী পশু গুলোকে ঘাষ, খড়, খৈল, ভুষিসহ দেশীয় খাবারের মাধ্যমে হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। অনেকে খামারি না হয়ে ও নিজ বাড়িতে ২/৪ টা গরু লালন পালন করে থাকে এবং বিভিন্ন মোটাতাঁজা করনের ট্যাবলেট খাওয়ায়ে থাকে। এসব ট্যাবলেট খাওয়ালে গরু ফুলে থাকে দেখলে মনে হয় অনেক মাংশ হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রয়ের সময় যে টার্গেট নিয়ে কোরবানি দেওয়া হয় সে পরিমান মাংশ হয় না।
অবশ্য এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। অনেকে বেশি দাম পাওয়ার আশায় স্থানীয় ভাবে দলগত ভাবে ট্রাকে করে গরু নিয়ে ঢাকার গাবতলি বা চট্রগ্রাম নিয়ে বিক্রি করে থাকে। আবার বাইরে থেকে অনেক ব্যাপারি কালীগঞ্জ ও সদরের সাধুহাটির বোড়াই নতুন গরুর হাট এবং গান্না বাজার থেকে তাদের পছন্দমত গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এরা এখন গরু কিনে নিয়ে ঢাকা বা চট্রগ্রাম এলাকায় মজুত করে রেখে বেশি দামে বিক্রি করবে এমন টার্গেট তাদের রয়েছে। বড় বড় ব্যাপারিরা ট্রাক ভর্তি করে গরু নিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাধুহাটি এলাকার চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দিন নাজির সাংবাদিকদের জানান, বোড়াই নতুন গরুর হাটে মোটামুটি ঈদের বেঁচা কেনা বেশ জমতে শুরু করেছে। ঐ এলাকার খামারীরা জানান, কোরবানীর ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে ততই ঝিনাইদহ এলাকার পশুর হাট গুলোতে গরু কেনাবেঁচা জমে উঠতে শুরু করবে।
তাই গরু মোটাতাঁজা করতে খামারীদের ব্যস্ত সময় পাড় করতে হচ্ছে। খামারীরা তাদের গরু বিক্রি করতে শুরু করেছে। আবার কেউ কোরবানি ঈদ সামনে করে বিক্রি করবে বেশি দামের আশায়। কালীগঞ্জের মল্লিকপুর গ্রামের তানভির হাছান ও শ্রীরামপুর গ্রামের ফরিদ উদ্দিন গরু মোটা তাঁজা করনের ফার্ম করে অনেক টা স্বাভলম্বি হয়েছে। এরা দেশিয় ছোট গরু কিনে বিভিন্ন পদ্ধতি মোটাতাঁজা করে থাকে। ক্রেতারা বলছে, এবছর গরুর দাম এখনই অনেক বেশি। সামনে আর ও বেশি হবে এমন আশঙ্কা করছে। অন্যদিকে গরু মোটাতাজাকরণের নিষিদ্ধ ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ওষুধের ফার্মেসি থেকে শুরু করে হাট-বাজারে।
সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধুরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওষুধ খাওয়ানো গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ ঢুকে। এতে কিডনির সমস্যাসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের ওষুধ খেয়ে গরু গুলো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে মোটাতাজার বিপরীতে অনেক গরুর মৃত্যু হচ্ছে। এতে লাভের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন অনেক খামারি। অনেকে বাংলাদেশি ভিটামিন খাওয়ায়ে মোটাতাঁজা করছে।
আবার কেউ ভারতীয় ওষুধ দিয়ে মোটাতাঁজা করছে। এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার এলাকায় মাঝদিয়া গ্রামের ঘোষপাড়ায় অনেকেই ৮ থেকে ১০ টি গরু মোটাতাঁজা করন করেছে। তারা এবার কোরবানি ঈদে বিক্রি করবে এমন আশা রয়েছে। কিছু খামারির ধারণা পশু মোটাতাঁজা করতে সহায়ক হয়। তবে তারা এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানেন না। আবার অনেক খামারি জেনেই এ পন্থা অবলম্বন করছেন। যাতে পশু মোটাতাঁজা হলে কিছু বাড়তি টাকা পান।